৩০/১১/১০

৪৮

তুমুল তুবড়ে আছি, বিষাক্ত স্বপ্নের যুথ
গেঁথে রাখি পাঁজরের তীব্র প্রিজনে
চোখ সেতো একফসলী জমিন,
অযথা হয়রানি তার
আষাঢ় কিংবা শ্রাবণে;
ভীষণ ভীষণ জ্বর, ভিক্ষুকের দল
রোদ যাবে, শীত যাবে,
বুকের স্বপ্ন পিষে ঘষটে ঘষটে, খাবে
বাদবাকী দিন,
ফুরিয়ে যাবো হাঁটতে হাঁটতে
একাই এক রাত সবশেষে, তারপর -
পালাব গভীরে ।।
________________________________
একটি বিকেল স্পষ্ট থাকুক,
ছায়া গাঢ় হোক
নিবিড় কান্না মুছে ভুলে যাক
পৃথিবীর যাবতীয় শব্দপাঠ
নিরপেক্ষ একা হয়ে জীবনের বিচ্ছিন্ন হাওড়ে
আঁজলাভ'রে অভিশাপ তুলে
ধুয়ে যাক আদিম দেহপাঠ ।

২৬/১১/১০

৪৭

নতুন কেনা কিছু কাপ পিরিচ পুরনো ড্রামের মতন
গভীরে জন্মানো নতুন কাঁটাটি গেঁথে যাচ্ছে আরো গভীরে
প্রাথমিক শীতের এই মরশুমেও লেপ মুড়ি, আর
কে কি বলল ভাবার আগেই খাতায় দাগ টেনে
ভালোই লাগছে কাপ-পিরিচ এবং কাঁটা আর কাঁচা শীত
বৃষ্টিও ঝরে গেছে দু'বার, রিকশাও ঠিক আগের মতোন
পথে বসা পরীদের জিরজিরে হাড়ে
জন্মে থাকে ভাত আর স্বপ্নের যৌথ ছত্রাক,

সবাই পড়ে ফেলছে ভেতরটা, একবার শুধু একবার
খুব বাইরে যাব, নতুন কাপ পিরিচে চা, জিব পুড়ছে ।।

৪৬

এখন
দিন বলে ওরা খুব চুপ
মাঝে মাঝে রাতের গাঢ় কালোতে ওরা বেঁচে ওঠে
দীর্ঘ প্রখর সব বিষাদের মনুমেন্ট, বহু দূরে ফ্লাডলাইট
আরো দূরে দেয়াল ভাঙার আওয়াজ, মুখ থুবড়ে পড়ে
আর নীচে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে যাচ্ছে
বিভিন্ন মানুষের পালসার, ফিয়াট এবং সম্পর্ক,

এই বোঝাবো সর্বশেষ
প্রচুর আলো থেকে ঢুকে দেখি অন্ধকার
সবার মুখই কালচে সবুজ ।।

২৫/১১/১০

৪৫

ঘুম থেকে উঠে কোনদিন যদি দেখি বড্ড দেরি, বোধেরাও দেরি করে,
শূন্য ঘরে একটু দূরে ঘুরে ওঠে পুরাতন পাখা, তার গুনগুনে নিরাপত্তার প্রশ্রয়
সেই অসহ্য উষ্ণতায় টুকরো হয় একাকীত্বের কীর্ত্তন,

সবাই কেবল খেতে চায় আকুল সুখ কামড়ের পর কামড়, খাক মরুক
আমি দাঁড়াই হা-ভাতে, ঠকবোই ঠকবো, দিনের পর রাত, রাতের পর ইতিহাস

মনকে পুরোপুরি সুখ
খেতে দিতে নেই
তাকে যথাসম্ভব
হা-ভাতে রাখাই
স্বাস্থ্যকর

৪৪

কেবল গড়াতে দেখতাম বাসের তলাটা
থাকত বিভিন্ন মানুষ আর
তাদের ব্যক্তিগত বিষাদে ভরপুর
শূন্য বোতলসমূহ,
এভাবে কোনদিনও ভাল্লাগেনি
দেখিনিও কোনদিন
খেতে চাইনি অর্ধেক জীবন;

যেদিন থেকে দাঁড়কাকদের নির্বাসন দিয়ে
মানুষগুলো ভাবছে পৃথিবী ভীষণ রঙিন,
আর রঙিন বলিনা কোনদিন
সাদাকালো-ই বেশ ছিল, এবং দিব্যি আছে ।।

৪৩

এবার সত্যি সত্যি হাঁটু মুড়ে বসে যাব
কেউ একজন দেখুক খুব উঁচুতে দাঁড়িয়ে
ভাবনাগুলো, অন্য মানুষের ছাদ এতকাল দেখেছি কেবল
নির্মাণাধীন ভবনের ধুলো, পুরাতন দেয়ালের ভেঙে পড়া,

ছাদে বসে বহু দূরে ঝাপসা হতে থাকা দালানগুলোর ডাক
শুনতে শুনতে শিখে নিয়েছি -
কথার ভেতর কুয়াশা থাকা কতটা জরূরী,
না হলে গা থেকে ঝুলে থাকে অসভ্য ক্লান্তির নগ্নতা,

এই হল এখনকার বিকেল
আমি ঝুলে যাব দ্বিতীয় এবং চতুর্থ তলার মাঝামাঝি
কোন এক নাটকের যে কোন সংকটকালীন মুহূর্তে, পুনঃপ্রচারে
স্বার্থপর, অসম্পূর্ণ এবং ভিত্তিহীন এক সত্যের আঁকশি বেয়ে ।।

১৪/১১/১০

৪২

বৃষ্টি পড়েনি পড়েনি,
কেন জানি কবে জানতে চাই,
জানি বা জানার ভান করি
কথার কথা সেই কথা জরুরী এবং কথা দরকারী
বৃষ্টি আসার কথা ছিল কি-না
এবার গতকাল সন্ধ্যা হল সুখ
মেঘের গন্ধ আর রিকশার হুড আঁকড়ানো অসম্ভব ভাল থাকা
বাতাসের মধ্যে ঝুলতে থাকা
আনন্দের টুকরোগুলো
সবক'টা পকেটে পোরা
খন্ড খন্ড অনুভূতি আর সামান্য ক্লান্তি,
অপেক্ষায় থাকবেন না বাঁধন, আমি কিন্তু আসবোনা
যেতে হয়না, হয়না
আর আমার দু'পাশের ফুসফুস
শেষমেষ ভয়াবহ কালো ।

৪১

খুব ধুলো আর অসম্ভব সব মেঘ গায়ে জড়াতে জড়াতেই
কষ্ট ধরা পড়ল বুকের তলায়, বাসেই চড়তাম তবু
উঠি উঠি করি রিকশায়, হেঁটে গিয়ে মানুষের ভীড়ে গেঁথে থাকি
কত বিশাল সব মুখ আর দাঁত,
সমান্তরাল হলুদ সব বিন্দুগুলোর ভেতর আর
যন্ত্রণার সাথে বিশ্রীভাবে মিশে ছিল হয়রানি
বিব্রত ভঙ্গীতেও দাঁড়াতে দিচ্ছিলনা, দেবেও না -
এই তো অল্প আগে ছেড়ে-ছুঁড়ে এসেছি সব
গাণিতিক সুখ দুঃখের ফর্দ হাতে বেড়াতে প্রবৃত্তি নেই তাই
হয়তোবা খারাপই লাগছে, লাগে

পথে পড়েছিল দুটো বৃক্ষ, একটি ভরপুর অন্যটি মৃত
তার মধ্য দিয়েই অনবরত ঝরতে থাকা ধুলো
আর বাকল, আর পাতা, পুনরায় ধুলো
কোনটা সুখ, বাকীটা দুঃখ, ছিলে যাওয়া ত্বকের মিনিবাস
আর ভেতরটা, খালি খালি খালি...