৩১/৮/১০

২৪

মার্ক্সবাদ অথবা লেলিনবাদের ঢিল গুলতি তলোয়ার
পচে গলে ধ্বংস হতে দেখেছি নানান জায়গায় অজায়গায়
তেলচিটে নদীর পাঁজরে থইথই করা অভিশাপ বরাবরই
টেনে নামিয়েছে আর দেখিয়েছে মাটি খুঁড়লেই
সহজলভ্য পৃথিবীর হাড়,

অবহেলায় কালশিটে পড়া সময়ের মলাটে
মানবতার দুমড়ানো বুক যাতে গণতন্ত্র মালিশ হয়
মাংসের প্রচুর ভারে কি দারুণ নুয়ে পড়ে
সম্পর্কের নানান কান্নায় তোবড়ানো মানুষ ।


31 August 2010

২৩

যে যার ব্যক্তিগত দুঃখবোধ আঁকড়ে প্রাচীন সরীসৃপ
মশারা নল লাগাবে ধরে আঁকড়ে চুষে খাবে
ফুলে ফেঁপে কোন এক বিশেষ মুহূর্তে ফেটে যাবে
এরপরও কিছু ব্যথা থাকে
অনাকাঙ্ক্ষিত যানজট আর মাছের বাজারে
নিবিড় কাদার মধ্যে পিছলে যায়
মন তো নিষিদ্ধ নিখোঁজ ঘুমের অস্পষ্ট কামড়ে
ওলটপালট, তরল যন্ত্রণার ব্র্যাকেটের ভেতর
কীবোর্ডের বাটন চেপে প্রাথমিক আগুনে পোড়া
ভাল থাকার চেষ্টা করা, ভান করা

31 August 2010

৩০/৮/১০

২২

(নচেত এ বাঁচা নয়, জঘন্য আত্মহত্যার চাইতে)



যা কিছু সংঘাতে মাতে বিশ্বাসের সাথে
যা কিছু ভুল বোধ হয় তা-মেনে নিই
না, নিতে চাইনা


মনে প্রাণে ঘৃণা করি যা,
এড়িয়ে চলি
তার থেকে পালাই,
জীবন যাপন হয় না তাই
প্রকৃতই অপারগ আমি
পারা উচিতও নয়
এ-ই বিশ্বাস।


_______________________

৩০|০৮|২০১০

২১

বহুদূরে তাকাবার ভান করি কিংবা তাকাতেও চাইনি
কেবল সরে যেতে চেয়েছি অভ্যন্তরের বিশৃংখলা থেকে
তাকানোর মত আছে এক লব বিহীন ভগ্নাংশ
দেখতে পাই নিজেকে
ধ্বসে যাওয়া কোন মিনারের উপর সারাক্ষণ বসে
"কী করছ ?" প্রশ্নে বিব্রত অপরাধী যথারীতি
নিজেকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবাভাবি

30 August 2010

২০

(হতচ্ছাড়া ডানপিটে এক শহরের সব দেবদারুতে দিয়েছে নিষিদ্ধ সব কথা)


দেখাটাই দোষ তাই

বাঁকিয়ে বাঁকিয়ে চোখ

দেখি বের করে ঠোঁট,

আর ভোরবেলার

পুরাতন সেই বালিশে

ঠোঁট চেপে কেঁদে-কেটে

রীতিমত অসুখ,


বিবেক

জানে কেবল দিতে কামড়

এর জন্য আর

কাকে দোষারোপ

ভাবছিলাম


তুমুল

সেই কষ্ট সাঙ্ঘাতিক 

১৯

সকল গণিত কঠিন
আবার কোনো ক্যালকুলেটর ও নেই
পুরনো দেরাজ ঘাটলে হাতে লালচে ধুলো
আর নষ্ট অতীতের প্রকট বিষ,
সম্পর্করা হৃষ্টপুষ্ট কান্না দিচ্ছে
মাঝবেলায় বেশি ক্ষিধে পাচ্ছে

যা সওয়া অসম্ভব তা-ই ঘটবে আজকাল
এবং পীড়াদায়ক বিরতিতে
যাতে না হয় চমৎকার অভ্যেস

একটা মন বানিয়েছি
শোলা কেটে কেটে
কিন্তু কোন সাড়া নেই কেন জানি
মাপে ভুল হলো কি না ..

২৫/৮/১০

১৮

দুঃখটা অন্যখানে,
খুব ব্যক্তিগত,
সুখের মতন ভীনগ্রহী না,
সুখসংগীতের থেকে ঢের মাইল লম্বা দুঃখের শৈল্পিক প্যানপ্যান ।
মোদ্দাকথা,
আজ আবার ঝাপসা আসমানের দিন
ভ্যাপসা রোদে মনের কথা বাদ-ই দিলাম
মাথার মধ্যে থই-থই করে কাঁচা বিষ ।

রাত হতো, ঘরটাকে অন্ধকার করে টিভি জুড়ে
তার দিকে পিঠ বিছিয়ে,
দেয়ালে হাজার আলোর হরতাল দেখতাম ।

সারা শহর চুপচাপ,
কেবল ফ্যানের ফিসফিস আর চৌকিদারের হুঁইসেল
আচ্ছা, আমার একটা প্রশ্ন আছে -
এত জোরে আওয়াজ হলে মানুষ ঘুমাবে কী করে ...

25 aug 2010

১৭

এইবার চুপ কর, বেশি খেয়ে ফেলেছিস থাম, দেখছিস না মানুষগুলো স-ব খেতে শিখেছে, এমনকি কুকুরও...

বৃষ্টি নামছে তো কার কি, এবার গায়ের কাপড় খুলে শুয়ে থাক, আমড়ার মাংসতে বিট লবণ কম না বেশি কে ঘাটবে ! তুই ইটের উপর লম্বা মেরে থাক । সন্ধ্যা হল, নে.. ওগুলো রিকশা যাচ্ছে তার ক্যাঁচক্যাঁচ তুই উঠবি না । তারপর বল, এই তোর বোতাম ছেঁড়া, পাজামার সেলাই খসা, আর কি খসিয়েছিস । চড় খাবি চেঁচালে, যা দেব চুপ করে খাবি । হা-করবি না, গন্ধ হয়েছে, উফফ.. বলছি না ওতেই হবে ... আরো বিশবার ।

এই.. ঠিকমতোন জামা গায়ে চড়াবি আর আমাকে দেখিসনি খবদ্দার... গোড়ালি কেটে রেখে দেব, আর হাত, নাক, কব্জি, বুকের ফল । চুপ থাক, তোর গা গন্ধ । মাংস পচাবি না খবদ্দার, খুন হয়ে যাবি ।

২৪ আগস্ট ২০১০

১৬

(রাত বরাবরই লজ্জার)

ভীষণ ঘনিষ্ঠ কেউ গা ঘেঁষে কাদা হয়ে ঘুমায়
আমি স্পষ্ট শুনি বসার ঘরে কারা যেন চুমু খায়
ইচ্ছে করে উঠে গিয়ে হাতেনাতে ধরি আর চিৎকার করি,
"এখানে চুমো খাওয়া পাপ", ক্লান্ত লাগে, অবসন্ন লাগে,
হাওয়ার মধ্যে হাজার 'নিপাতনে সিদ্ধ' জীবাণু,
সমাধির ভেতরে পুড়তে থাকা কোন শরীর
কখনও কি খুঁজে পাবে দু'দণ্ড মুক্ত বাতাস !

মাথার জঞ্জালগুলো কামিয়ে এবার বসতে হবে টেবিল পেতে
এখানে মানুষেরা বাজে বকতে বকতে মাথায় উঠে বাথরুম করে
এবার মানসম্মত উপায়ে কামানো চকচকে টাক
বরদাশত করবে না কোনরূপ তোষামোদ,
কোনপ্রকার গাড়ীতে পায়ে পা তুলে বসা বারণ,
সব বন্ধ, এমনকি যত নির্মাণাধীন ছাদ,
সবজির নামে বেচে দেয়া যাবতীয় বিষ ।

মেঝেটা মুছে দিলে ঘুমাব এখানেই,
যদিও বিদ্যুত নেই, যতটুকু পানি আছে গা ধুয়ে চুল ধোয়ার পানি বেচে যাবে
ওদের মতন চেঁচাবো না, ঘুমাবো, গায়ে হাত দেবোনা,
শুতে চাইলেই শোব না, কসম ।

২৩ আগস্ট ২০১০

১৩/৮/১০

১৫

(লেকের পাশে এত গন্ধ থাকবে কেন !)

এক পিঁপড়ে উঠেছে আরেক পিঁপড়ের সঙ্গে,
উঠতে উঠতে সাধের ব্যক্তিগত দেয়াল ডিঙ্গিয়ে,
কিছু রক্তের রেখায় অল্প এলোমেলো হয়ে
তারপর আবার তিরতির করে উঠতে থাকে পকেটের পেছনে
শেষে বুকের কাছে অন্যমানুষের জামা লেগে ওরা গেল অন্য দেহের পৃথিবীতে ।

হাতের মুঠোতে চিনি এক প্যাকেট আর মুখের মধ্যে জমাট থু থু ফেলা যাচ্ছেনা, গেলা যাচ্ছেনা ।
অনেক্ষণ পর পর কোত্থেকে বাতাস আসে ভারী মিষ্টি আর তাছাড়া সারাক্ষণ, কি উদ্ভট গন্ধ,
পালানো অসম্ভব, বিপদ বিপদ ।

৯ আগস্ট ২০১০

১২/৮/১০

১৪

(জ্ঞান ব্যাপারটা তর্কসাপেক্ষ)

পিঠের উপর প্রচুর জ্ঞান
ছোট বাচ্চাটিকে কুঁজো হয়ে হাঁটতে হয়,

পিঠে হালকা এক ব্যাগ জ্ঞান
কিশোরটা দিব্যি কলেজে যাচ্ছে,
 
আকাশে-বাতাসে জ্ঞান
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবকের বুকে-কব্জিতে দুর্দান্ত শেকল

তো !
শিক্ষার স্তর দারুণ কার্যকর !


ক্রীড়াবিষয়ক ক্ষেত্রটাও লক্ষণীয়, প্রযুক্তি যেমন হাঁ করে গিলে খেল,
আজকাল চর্বি কমাতে আর পেশী বাড়াতে যেতে হয় দেহের দোকানে -
পেশীবহুল যুবকবৃন্দ, টগবগে ম্যানিকুইন !

খাবার ছিল বেঁচে থাকার মূল,
ইদানিং আবিষ্কার হল ইহা দেহের জন্য ক্ষতিকর,
তাই আধুনিক মানব মানবীগণ খাদ্যগ্রহণে অনিচ্ছুক ।


সভ্যতা এবং আধুনিকতা
উভয়ই যথেষ্ট জটিল বিষয়।

০৪ আগস্ট ২০১০

১১/৮/১০

১৩

(সভ্য হতে চাও, গায়ে শিল্প চরাও)

কারো পোশাক বাড়ে অপ্রয়োজনীয়
আবার হ্রাস পায় অপরিহার্য
ওরা বলে ফ্যাশন,
আমি বলি সহস্র নকশার তুমুল তুফান,
সুতি, সিল্ক, শিফনের জমিনে ।

দেহের উত্তাপ কমাতে ওরা খেত আইসক্রিম,
আজকাল উত্তাপ বাড়াতে ভদকা
নাচতে নাচতে বেশ ভান করে ঢলে পড়ে,
এই না হলে সভ্য-তা !

ভয়ংকর দর্শন মিউজিক সিস্টেমগুলো গর্জাতে গর্জাতেই হচ্ছে বিকল,
আলট্রা মডার্ণ সং সংক্রান্ত এ্যাটিচিউড বলে কথা ।
মৌসুমে মৌসুমে গাড়ী পাল্টিয়ে, বুকে বাহুতে ট্যাট্টু পরে, চুলে রঙ লাগিয়ে,
ঠোটেঁর নীচে, জিবে ধাতুর বল বসিয়ে বাড়ছে ইঁয়ো জীবী জেনারেশান ।

তাদের জন্য আধুনিক প্রার্থনা।।

০৪ আগস্ট ২০১০

১২

 (লোকজন সভ্য হয়ে যাবে কোথায়)

আঙুলে বেছে বেছে ভরেছে সতেরোটা ব্যাগ
তবু সপ্তম তলায় ওঠা চাই,
কী ভয়ংকর আলোয় ঝলসে যাচ্ছে মুখগুলো আর শরীর
সিঁড়িগুলো আপনা থেকেই উঠছে, নামছে ।
জামা, প্যান্ট, শাড়ি, সালোয়ার,
খেলনা, গয়না, বাসন-কোসন, টিভি, ওভেন,
কী যে নেই ভাববার আগেই
লোকজনের ক্ষিধে পায়,
দু'হাত তুলে ডাকে খাবারের কোর্ট,
দোসা, ফ্রাইড চিকেন, তন্দুরী
কেউ তো সিনেমা দেখবে বলেই আসে
প্রচুর রঙে রঙচঙে মানুষের এই ভীড়।

শুধু কোনো কোণ নেই যেখানে চুপ করে বসে কাঁদা যায়,
চিৎকার করে ওঠা যায় ।
মানুষ তো বটেই,
ম্যানিকুইনগুলোও আড়চোখে তাকাতে শিখেছে।



০৪ আগস্ট ২০১০

১১

(উলঙ্গ আগুনে পোড়ে যত শুভ্র ফুল)

ভীড়ের ভেতর কেউ কেউ
হাত রাখে পত্রিকার উত্তাপে,
অন্যের পায়ে মৃদু চাপে
দেঁতো হাসির শহুরে সংস্করণ।

পেছনে দৌড়ুতে থাকা সিগ্রেট, চানাচুর, খাবার জল
আবার বই হাতে তেড়ে আসে কেউ, বাসে বাসে ।
আর যারা হাত-পা বিহীন,
করুণা চাচ্ছে হৃদয়হীনদের কাছে, সমঝোতা করছে
যারা চতুর, ডাকসাইটে,
ক্ষুধার্ত বাচ্চাগুলোকে শিখিয়ে পড়িয়ে নামিয়ে দেয়,
জোর করে কাঁদিয়ে দেয়,
দিন শেষে লুফে নেয়
ছিঁড়ে নেয় জামার পকেট ।

যারা বিষজীবী, ধোঁয়াজীবী,
ছড়িয়ে বিষ শেকড়ের মূলে,
ডালপালায় মরণের স্টিকার সেঁটে বরাবর ছোঁড়ে থু থু, ভবিষ্যতের বুকে ।



০৪ আগস্ট ২০১০

১০

(চারদিকে অজস্র ছায়া)

অতটুকু বেঁচে থাকা সন্ধ্যেবেলা
সেতুর শরীরে শরীর, আর সন্ধ্যাতারা

জমাট ভীড়ে, প্রচুর মানুষ
গায়ে গা ঘেঁষে হাঁটে
মহিলা-বাচ্চা-বুড়ো নির্বিশেষ ।

আকাশ মায়াকাড়া লালচে,
কোথাকার কোন আলো
মেঘ থেকে বেরুতে চায়,
তাই দেখে গোটা গা'য় ঝিমুনি,

আর উল্লম্ব নয় কোনদিন , কেবল আনুভূমিক ।


১ আগস্ট ২০১০

০৯

(জল জল আর জল)

শেষ না হোক, শেষ কে চায় !

জমাট ঘাসে বসি,
মিহি বালির গায়ে আঙুলে দাগ দিই,
গায়ে গা করি,
হাওয়া ঢালে শরীর ।

কাঁকড়ের স্তুপে পিঁপড়ের সারি,
কলমি হেলেঞ্চার পাতাগুলো ওভাবে কে ছিঁড়ল !
আকাশে একধারে মেঘ, অন্যধারে লাল লাল এবং নীল !

পানিশাকের ঝোপে তিনটে হাঁস,
একপাশে ভীড় হয়ে থাকা কচুরীপানা আর ওর মাঝেই লুকোচুরি দিচ্ছে জলজীবীরা,
ওরা ভাল থাকুক ।।

৩১ জুলাই ২০১০

০৮

(উড়াল ব্রীজের উপর দাঁড়ালে বাস আর মটরগাড়ীর হাড়)

পুরনো পত্রিকার সম্পাদকের মাথার অসুখ,
বিজ্ঞাপনপিছু দুটো করে মেয়েমানুষ বেচে দিচ্ছে
কাগজকলের ভয়াবহ দুর্যোগ,
মরিচে ঝালের সংকট দাম বাড়তি
বিলবোর্ড পাল্টাচ্ছে আবার
পুরনো সাইনবোর্ড হলুদ রঙ লাগাচ্ছে,
অথচ দেখছেনা শহরের মন খারাপ,
সে কেবল গ্রাম হয়ে যাবে স্বপ্ন দেখে ।

মানুষ আর গাড়ী খুব বেশি ভিন্ন কি !

বিড়ি খেয়ে ক্ষিধে নষ্ট করার মানুষ বহু,
আবার টাকার মধ্যে কিছু সস্তা শব্দ আর
যোগাযোগের গাণিতিক মাধ্যম সাঁটানো কারো কারো মৌলিক কর্ম ।
পারভীন বা জয়নাল, যাদের প্রকৃত খাবার প্রয়োজন,
যাতে ঝাল বেশি নুন কম বেশ গরম,
তবু চেটেপুটে খেয়ে চাপকলের মিষ্টি জল
আর ঘুম, সে ঘুমোলেই হল ।

২৯ জুলাই ২০১০

০৭

 (এক টিনের কৌটোতে শহরের নামী কবিরাজদের নাম লেখা চিরকুট)

কেউ ঘুমায়,
কেউ ভান করে গুহাবাসী বাঁচে
অবশিষ্ট জেগে রাত্রি দ্যাখে,
চুলের কোলে ধুলো পোষে,
ঝরা পাতা, ঘামের বিন্দু, শিশিরের দাগ,
গাড়ীর তেরচা আলো
আস্তে করে রাত বুড়ো হয় ।

ফলের দোকান, আন্ডারপাস, ওষুধের দোকান,
ময়লার বাক্সে ফেলে দেয়া পলিথিন ব্যাগ, ডিমের ভাঙ্গা খোসা ।
এই এক টেম্পো শব্দ দিল
ফুরোতে ফুরোতে রাত রোদের গায়ে ঘন ঘন সুড়সুড়ি দিয়ে যায়
তাই চোখ কচলানো ভোর
সাক্ষী ছিলাম বলে চুয়ান্ন ধারায় গ্রেপ্তার ।

ভাঙাচোরা ঘরটা জানলাটা দেখছি,
তারপরও কী গাঢ় ভালবাসা
সংজ্ঞা নিয়ে কেউ নেই প্রশ্ন তুলবার
যাত্রী ছাউনী, আশ্রয় সর্বশেষ, পায়ে হাঁটা মৃত মানুষ দেখি ।

স্টেশনের খুচরো লোকগুলো
বুকে বোতাম নেই,
খুড়তে খুড়তে ফুটো শহরের মেঝে, শেষে মরেছে
কিছু জৈবিক ছত্রাক রেখে অবশেষ,
লজ্জার স্থিতিস্থাপক বেলুন, ব্যবহৃত শিশিগুলো;
জং ধরে ক্ষয়ে যাওয়া ছুরিতে খোদাই, অনিবার্য অপঘাত 


২৯ জুলাই ২০১০

০৬

(শহরে নেই কাকের কমতি তবু পাখি থাকেনা)

ফুটপাত,
প্রচুর হল্লার পর প্রায় শান্ত
কেননা নিশুতি,
বাঁ তালুতে মুছে চোখ
আরেকটাতে জ্বলন্ত কাঠ,
চুলো পোড়ানো আজব ঝক্কি
পোড়াগন্ধ পরিবেশ,
নিয়নপোস্টের যৌবনকাল,
চার ঘন্টা পর ভোর ।
আবুল, সালাম, সালমাদের অশ্রুমূল্য
কমতে কমতে দু'টাকা বা এরও কম, খাবার হোটেল চোখ কচলায়,
ফিল্টার পানি যথেষ্ট শীতল নয়, গালি খায়
চোরা এক ট্রাক টলতে টলতে যায় ।

ওরা বের হয়েছিল
আর বের হবার ইচ্ছেটাই কাল,
রক্তের রং লাল, কাল গেলে খয়েরী;
চা পাতার সংকট, বিড়ির দাম বাড়তি,
যে খায় সে মরে, যে না খায় পস্তায় অধিক;
শহুরে রাতের ক্লিয়ারেন্স,
অতি শুদ্ধবাদী সমাজের ভন্ডামী, নষ্টামি;

ভরা চাঁদের আত্মহত্যা ।

২৬ জুলাই ২০১০

০৫

(সেতুর গোড়ায় বাদামী মেয়েটার কালো চুল উড়ছিল জলশুদ্ধ)


সেদিন অনিয়ম দিবস ।
নগরের পরিত্যক্ত মসজিদটির তালা ভেঙ্গে আজগুবি লোকগুলো জামা খুলে দিয়েছিল ।
মেঘগুলো জল দেবেনা,
অচল ঘোড়ার গাড়িতে দুদিনের লাশ আর মাথায় ঠোঁটে শ'খানেক মাছি ।
ম্যানহোলের ডালার ওপাশে একটা মানুষের বাচ্চা হাত পা বাঁধা,
একবিন্দু দুঃখকে আঁকড়ে ভেসেছিল গলন্ত মাথা ।

সময়টা দূষিত বায়ু বা প্রচুর দূরবর্তী সমূদ্রের নিয়মে তারিখের তালিকায় ফিরে গিয়েছিল ঠিক,
তবে প্রেম হারাল তাবৎ পুরনো মানুষ আর স্বচ্ছ হৃদপিন্ড
তিনদিনের ভুখা মেয়েমানুষ পথেই শোয়, পরের বেলার দুটো রুটি বা সবজিভাতের নিশ্চয়তায় ।
জন্তুমুখো পুরুষগুলো চোয়ালের কার্যপ্রণালী সমৃদ্ধ করে
ফুটপাতের চাপা গোঙানি ল্যাম্পপোস্ট, ভাঙ্গা সাইনবোর্ড,
দুর্গন্ধসর্বস্ব খাল আর পাগলের শরীর ।

বিক্রি না হওয়া সবজিগুলো একত্রিত হবে,
পিপড়ের বাসা বনে পচতে থাকবে যদিনা আবর্জনার গাড়ি খবর পায় ।
যদি ভুল করে বৃষ্টি ঘটে জলও জমবে, কাদা হবে,
চেনা দোকানে দেনা বাড়বে,
ইট ভাঙা বুড়োমানুষটা থ্যাঁতলানো হাত নিয়েও বাসি ভাতে বসে যাবে রোদশুদ্ধ দুপুরবেলায় ।

২৫ জুলাই ২০১০

০৪

(নিরেট ধোঁয়ায় বসে কেউ খাবে সুখ)

একমনে হেঁটে যাবে যারা বোকা গোবেচারা
যারা ঘুম থেকে হাতে করে স্বপ্ন নিয়ে ওঠে,
ভাবেনা পথের ধারে ঘুমাতে গিয়ে
অথবা যারা শোয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিছানায়,
তাদের ঘুম

খাওয়া যায় মাটিতে বসেই
তবে বহুমূল্য ডাইনিং টেবিল, তাতে কত বাড়ে খাদ্যগুণ !
কারা খায়, কাদের খেতে দেয়, আর কারা খাবেনা, ছড়াবে !
একমাত্র ফুলকে ছিঁড়ে গাছকে নিঃস্ব করে যাবে,
তারপর পায়ে মাড়াবে !
আর সুখী হবে বারবার !

২২ জুলাই ২০১০

০৩

(সাবধানে কাটা তবু রক্ত গড়িয়ে পড়ে)

এরা বিচ্ছিন্ন অতঃপর

বাঁ পাশে মাথা তোলা বিকৃত সাইনবোর্ড
হাজার বৎসরের জমাট যন্ত্রণায় কালো হয়ে থাকা
ক্রমশঃ রক্তের গায়ে জমা পড়ে জোড়া জোড়া পদচ্ছাপ, এরা যায়

সভ্যতা এবং শহর,
লকলকে হলুদ জিব, সন্নিবিষ্ট অনুভূতি,
ক্রমান্বয়ে ভাঙতে থাকা আলোর দালান,
উগরানো বাক্যের ভীড়ে কিছু আঁচড়, গভীরতর
সীমিত বক্রতার নিজস্ব খনন, সঞ্চরণশীল
লালসার ব্যাপ্তিতে অপ্রাপ্তি
প্রচুর ঝড়-জল,
রাস্তার পর্যাপ্ত কাদায় টেনে টেনে রিকশা
বাসগুলোর থেমে থাকা, চলে যাওয়া ।

খাওয়া-পরার চিন্তা নেই বলে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে, বিলবোর্ডগুলো
কেউ কেউ ব্যানারে লজ্জা ঢাকতে পারছে,
হতভাগা শহরটার কাপড় নেই, বড়সড় লজ্জা বুকে কুঁকড়ে
নামে রাত, নামতে নামতে বেঁকে যায় উঁচু উঁচু ভবনের শরীরে
সময় এবং অসময় মাতে একে অন্যের উপহাসে
ফাঁকতালে চুরি হয় ।
বেশিরভাগ মানুষ ঘুমন্ত, সম্ভবত কেননা
কেউ ভাবছেই না পুড়ে যাচ্ছে পৃথিবী , কেউ ভাবেনা কখনও ।

বর্ষার মেঘ সবিশেষ,
বর্ষণের আশ্বাসে উড়ে আসে প্রশস্ত আকাশে ।
নির্ধারিত পরিক্রমায় পাতা ওল্টাতে
দখিনের হাওয়া দিক ভুলে জল ছুঁয়ে জড়ো হয়
কোন নিঃসঙ্গ গাছের নীচে
পরবর্তী গন্তব্য মানচিত্র হতে মুছে যায় ।

২২ জুলাই ২০১০

০২

(ইচ্ছে করে ফেরিওলার সব তোয়ালে কিনে রাখি)

কিন্তু কী হবে ?
চোখ বন্ধ, জানি সামনে বিস্কুটের ফ্যাক্টরী,
ফুলের দোকানে বিনামূল্যে পচা ফুলের সুবাস,
আর কার যেন বিয়ের গাড়ী, ধাক্কায় রসগোল্লা গড়াল নর্দমায় ।

এরপর ধরা যাক রাস্তা লম্বা সরু
চোখ বুঁজে হাঁটলে হোঁচট, হারালে বিপদ,
জায়গা অ-জায়গায় ঢিল, সূত্রে গোঁজামিল,
সরলের ফল মেলেনি, মেলেনা ।
মানুষ যতই বানাক ভান, মুরগির রানটাই খাবে ঠিক ।

চেনা হলে নয়, অচেনা রিকশাতেই বিতণ্ডা চলে
বাসে উঠে যার তার গায়ে হাত দেয়া যায়,
আর ক্ষিধে থাকে হোটেলের আশেপাশে, অচেনা খাদ্যের ঘ্রাণ টানে
আর কাক, সেতো মুরগির পালকে লটকে থাকা মাংসটুকু ছোঁ মেরে নেবেই ।

বরাহপুত্রগণ তের কোটি টাকা চুরি করলেন আর বাহবা খেলেন,
তাহলে বাচ্চা ছেলেটা চা-তে চিনি কম হলে ধমক খাবেনা !!
এতদসংক্রান্ত আর্টিকেলে পাটকেল দেয় বারডেমের সামনে ইদানিং বসে থাকা পাগলটা,
শিডিউল হট, অ্যাপয়েন্টমেন্ট দুর্লভ !!

প্রচন্ড স্যুপ খেতে ইচ্ছে করলেও খাওয়া যাবেনা ।

০১

(পায়ে পা ঘেঁষে দূরবর্তী দোকান)

চা হয়
তাতেই ঝুলে ছিল শুকনো রুটি,
ওটার গায়ের ছিদ্র তালুর স্পর্শের বিবেচনায়
বেঞ্চিতে বসা বৃদ্ধমানুষ দাঁড়ির মাছি,
কানামাছি নয় ।
থেমে থাকা গাড়ির কাঁচে ধুলো
আসমা খাতুন, বিমূর্ত প্রলাপ ।
পরিপ্রেক্ষিত খাবার জল
এক আঁজলা সম্বোধন, লোকজন মৌমাছি
বিনোদনের প্রযুক্তিগত উৎপাদ,
সমানে সমানে দুটো শপিং মল হাতাহাতি চাইছিল,
কাছে দূরে উড়াল ব্রীজ, এদের যাবতীয় ব্যস্ততা ।

ছোট বাসগাড়ির মানে কি -
এক মানুষের গায়ে ঘাম মোছে অন্যমানুষ !
কারো কারো কাছে -
টাকাকড়ি এতটাই সার্বজনীন !
আস্তাকুঁড় ছাড়া কি কুকুর বসেনা !
কুকুর ছাড়া কি নেই আস্তাকুঁড় !
এসব সূত্র কি নেই পদার্থবিদ্যায় !
আর ভ্যাপসা দিন -
এতটাই বুড়ো যে রঙের টিউব লাগবে !

কোন পুস্তক লালসা জাগালে তা চুরিতে দোষ নেই
কেননা আমরা ডিমচোরকেও দোষ দেই
রাজপথ খুঁড়ে টাকা বের করে যোগ্য নেতা স্বাস্থ্যবান
আর আমরা
ঘামে নেয়ে
বাসে ঝুলে ঝুলে
বাসায় ঢোকামাত্র লোডশেডিং !
এ-ই বোধহয় চাই।।