৩০/৯/১০

৩৯

পড়শু সন্ধ্যেবেলা
আমি, আর সব মানুষ মিলে আকাশে তাকিয়েছিলাম
সবচাইতে প্রতিথযশা পাগল, সে-ও
বলা নেই কওয়া নেই কেবল কাঁদল
গাঢ় এক কবি ঠিক যেভাবে হাসে;
আজ ভোরেও দেখি হাজার হাজার কাক
সে কি বিশ্বাস !
ডানা ধরাধরি করে বসে থাকে জানলার অল্প দূরে
আমি ভান করি একটু মানুষ !
আড়মোড়া ভাঙ্গি মুখে-চোখে জল
রোদে যদি ভেসে যায় সমস্ত ঘর !

মনে পড়ে অকারণ
বিস্মৃত সহস্র স্বজন
কেঁপে কেঁপে গানের ফাঁকে দুঃখ লিখি
কেননা কর্তিত ঘাস আর কৃষ্ণচূড়া এত বেশি !
এত বেশি সুখ, যে অপরাধী লাগে
এত বেশি ভাল থাকা, যে কান্না পায় ।।

২৮/৯/১০

৩৮

ভেঙ্গে পড়া নতুন এক ছাউনীর তলায়
বৃষ্টির থেমে যাওয়া দেখি
আর নিজের অনুপস্থিতি গিলে ফেলি,
কোত্থেকে প্রকান্ড এক শূন্য
রুমালের ভেতর লটকে
চটকে গেছে পেছনের পকেটে
আর লেগে লেগে ঝুলছে যৌবন,
এরপরও কর্পোরেট দালানগুলোর পাশে
সম্পূর্ণ একা অবস্থায় দাঁড়াতে দাঁড়াতে
শিউরে উঠছি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ঢাউস চিৎকারে,

কবুতরগণ আজকাল মোটামুটি সুখী
পেটের উপর পরিচয় ঝুলিয়ে
ধীরে ধীরে উঠে যায় বারান্দায়
রাস্তায় দাঁড়িয়েই চা খেতে খেতে
আর বিজ্ঞজনের বকবক শুনতে শুনতে দেখি
সবথেকে বিরক্তিকর লোকটার মুখে
দু'নম্বর সিগ্রেট ।।

৩৭

নির্বোধ মানুষগুলো কি নির্বিকার
রেয়নের বোকাবোকা পদাঁ ফুঁড়ে
ছেড়ে যাচ্ছে
ঢুকে যাচ্ছে
অদেখা ঈশ্বরের গোটানো আস্তিনে,
ওদের নষ্ট শহরে
অনেকটা শিশির সম্পর্ক
জমে জমে উড়ে যায়..
আর কচুরীপানায় জীবন খায় কেউ
সকাল-বিকাল-শেষরাত ।।

___________________ _
সেপ্টেম্বরের আঠাশ ২০১০

৩৬

খুব ছিল পুরাতন
পরিচিত দিব্যি শহর
আমিও,
ঝুলিয়ে দিই দীর্ঘ ক্লান্ত ব্যাগ
দারুণ উচ্ছ্বাসে -
পাঁপড়ি খুলছিল পায়ে পায়ে বহমান
আটটি তাজা কুঁড়ি
টগবগে, জীবন্ত, ভরপুর
ভেদভুলে হাত চাইতেই -
টেনে ধরে নষ্ট জীবন
ছিঁড়ে নেয় সুখ আর
যাবতীয় হুল্লোড়...
তাই আর হলোনা কিছুই
ক্ষয়ে গেলো বুক, জীন্স আর -
প্রাচীন জুতোর তলা ।।

২৩/৯/১০

৩৫

সেই কবে থেকে
ঘুমাতে ঘুমাতে সকাল গেল টাইলস কাটার মেশিনে
ভাল্লাগেনা রোজ শ্যেভ,
দোকানের সাটার উঠতে উঠতে
মানুষের হল্লা বাড়তে বাড়তে
গাড়ীর ভেতর ওরা পেল তুমুল হৈ চৈ,
মাথার অসুখ না হলে কি
চাবি ভেঙ্গে ভেতরে বসে
আটকে যায় দেরাজ !
বোধের ঘুম ভাঙল কি ভাঙলনা
ঘরের ভেতর সন্ধ্যে ঢুকে শুয়ে থাকে,
বায়বীয় আগুনের ভয়ে
জানলা দুটোর একটি বন্ধ করি আর
শোরগোলে তন্ময় হয়ে থাকি
উফফ.. যা বকলনা মানুষ !!

১৬/৯/১০

৩৪

এখন অব্দি পকেটে এক সেলফোন কাঁপে
বিপরীতে দন্ডায়মান কিছু বিপন্ন লোক ক্রমশঃ
পরিণত হচ্ছে ধোঁয়ার কারখানায়,
এপ্রান্তে আমি আর দু'টো নিরক্ষর কুকুর
দিন হলে মাথার উপর উড়ে যেত কাক
রাত বলে খুঁজে পেতে সামান্য বাদুড়,
নিজেকে লাগছে ঈশ্বর ঈশ্বর
ওদের লোলুপ চোখে বিজ্ঞাপনের লাল এবং নীল
খুব করে তাকালে দগদগে ভয়
দেহের দোকানে পড়ে থাকা লোকজন বুঁদ,
আর আমার উরুতে কাঁপে সেলফোন
সামনে টলতে থাকে ধুমপায়ী দেবতাগণ ।।

___________________________
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১০

৩৩

পথঘাট সব-ই নতুন লাগছে, কেন

সব বাতিই আজ আলো দিচ্ছে,

তাই কি কোন কুকুরের গায়েই আর কাদা নেই,

আস্তাকুঁড়ের সব জঞ্জাল চেটে পুটে, কে যেন

চলে গেছে জন্মের মত,শহর খুব পরিচ্ছন্ন মেম

মনখারাপের ধূসর সেই শাল জড়িয়ে চুপচাপ

তাকিয়ে আছে বড় আকাশের দিকে,ভীষণ

হলুদ আর নরম এক আলো গলে গলে

স্পর্শ নিচ্ছে দুর্বল বাকলের দাগে

চুঁয়ে চুঁয়ে জমছিল বুকের খানিক নীচে,



আইল্যান্ডের উপর বুড়ি ভিখীরি মা

কি আকুল চিকচিকে চোখে

দু'হাত বাড়িয়ে রাখে !

এসব ছেঁড়েছুঁড়ে

আমি কেমন ঘরের খোঁজে

হেঁটে চলেছি রাতের পর রাত !!

৩২

বাইরে বেরুলেই ফুটপাতগুলোর তুমুল কানাঘুষা শুনি
ক'টা ল্যাম্পপোস্ট পার হই হিসেব থাকে না
আমি হাঁটলেই এত ক্ষতি দেশবাসীর !
কেউ এল না পাশে দাঁড়াতে সাহস করে,
খানিক বৃষ্টি হলে জল জমে যায়
পায়ের আঙুলের অলিতে-গলিতে ঘাঁ হয়
তাতেই এত ভয়
মনের মধ্যে ঘাঁ না হলেই হয়,
বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ভেসে যাব
যখন যে হাওয়া পাই, ভয়ডর ছুঁড়ে দেব,
ওরা দারুণভাবে প্রতি স্টপেজে শসা ফেরি করে
আমি ওগুলো থেকেই বেছে তুলে হেঁটে যাব দক্ষিণ
বাসগুলো প্রচুর চাপাচ্ছে,
দোকানের তেরচা আলোতে অন্ধত্ব গিলে ফেলি,
এবার নাকি কেজি দরে ভগবান বিক্রি হবে ।

১৪/৯/১০

৩১

ওদের স্বয়ংসম্পূর্ণ শহরের বাইরে প্রকান্ড এক শূন্য ছিল

ওর মাঝখানে দাঁড়ালে সব-ই মনে হত মূল্যহীন,

কথা রাখবার মতন জীবিত ছিল সতেরো জন,

খুব ভাল করে তাকালে সব ঘাস উপড়ে নেবার দাগ

মানচিত্রের স্বচ্ছ অঞ্চলটুকুও যা-কিনা সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে

এতকাল সরে সরে উঠে আসছিল শহরের দিকে সেই শহরকে

অল্প অল্প

চিনতাম ।



___________

১৪|০৯|২০১০ 

১৩/৯/১০

৩০

লোকজন প্রচুর টমেটো খাচ্ছে আজকাল
বিকেলের গোটানো রোদে ছুটতে গিয়েও
ওদের দু দুটো লেংচানো গাড়ীর সাথে লেগে গেলো,
ওর আগে-পিছে-পাশাপাশি-কোণাকুনি
কোনোভাবেই হাঁটতে প্রবৃত্তি নেই,
এরই মাঝে এক লোক আর তার ছায়া
দুই বালতি রক্ত নিয়ে দাঁড়ালো,
পেছনের পকেটে পয়সা নেই
সামনের ডানদিকে বইয়ের ক্যাটালগ
বামদিকে বাসের টিকিট ছেঁড়া,

মানবীয় চুলের দূর্দান্ত দাঁড়ানোতে
ভয় লাগছে ছেলেমানুষি
কেউ একজন যদি এসে জিজ্ঞেস করে
কেন এভাবে ছিঁড়ে ফেলেছি নিজেকে !

২৯

বেঁটে মানুষগুলো হঠাৎ কি চমৎকার লম্বা বনে গেলো
বসবার নীচু বেঞ্চিতে মৃত পাতারা পুরু হয়ে জমলো
ডান বাম দেখে দুটো কুকুরের একটি আরেকটিকে জাপ্টে ধরলো
আর কোন কাক নেই কি সর্বনাশ !!
খুব একা কেউ টেপরেকর্ডারে কা কা বাজায়,
বারান্দায় ভয়ংকর মেঘ আর ধুলো
ছুটি পাইনি বলে বিদেশী গান ধরেছি
বিদ্যুৎ গেলে বাইরেটা দেখব আর
এর সাথে কোন সিংগেল সানডে হবে কি-না
খাতায় লিখছি আর ভাবছি ।

২৮

স্বপ্নে রাতভর নিষিদ্ধ গল্পের নির্বাসন চলল,
ধীরে ধীরে ঘরের মধ্যে অসম্ভব রোদ
বিদেশী গান শুনতে শুনতে খুব দূরে রিকশা পেতে
কেউ একটা লোক হারিয়ে যায়
প্রচুর ভোর আর ছুটি বলে মানুষজন খুব আসেনি
আর জল ঝরছিল দারুণ আকাশের ফোঁটার মত
গোলাপী শহরের জানলাগুলো সবই বোধহয় সবুজ
কেউ একজন মাইকে করে অন্য কাউকে ডেকে গেল
ডাকাডাকির পথঘাটে যারা ছিল ইচ্ছে করে ভুলে গেল
পৃথিবীর কথা ।

হাঁটতে পারে কি পারে না এক মানুষের বাচ্চা
কি না কি ভাবতে ভাবতে হোটেলের মুখে পড়ে থাকা
মৃত কয়লার উপর উপুড় হয়ে ভয়ানক কাঁদে ।
___________________
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০

৯/৯/১০

২৭

ইউক্যালিপ্টাস যুগের বিকেলগুলোতে আকাশ থেকে বাঁধ না মানা বিষাদেরা
ঝিরঝির ঝরতে ঝরতে ভিজিয়ে দিত দু কাঁধ, কপাল, ভ্রু - আর ঘাসকে
আঁকড়ে ধরা ছেলেমানুষী, টুঁটি চেপে হত্যা করা ইচ্ছেদের
সহজলভ্য ইস্পাতের নির্ভরতায়,

এ সবই সীমাহীন অসংলগ্নতা আর বাতুলতার ঘনীভূত শিশির
কেননা পাগলামী বড় নিষ্পাপ এখনকার আধুনিক বিকেলে
মার্জিনটানা পৃষ্ঠায় ছড়িয়ে দেয়া গাঢ় অক্ষরগুলো
শব্দ হতে না হতেই ছেড়ে উড়ে যায়
আর আমার কেবল
মরে যেতে অনিচ্ছে
মরে যেতে অনিচ্ছে...

৮/৯/১০

২৬

লোশানের টিউবে ভয়াবহ জ্যাম
তবুও চেপেচুপে সীমিত চুনকাম

প্রথাগত পৃষ্ঠাগুলোই আপাতত থাক
এমালশানে ভ'রে দিতে নতুন শব্দ
ঠুকে ঠুকে..
অনুমোদন নেব না'হয়
আগামী ফাল্গুনে
আর এই ফাঁকে
পউষের ছুটিটা হয়ে যাক সাহারায়...

সই !!!

০৮ সেপ্টেম্বর ২০১০

২/৯/১০

২৫

কেউ কেউ আছে তো এমন
ভুলভাবে এসে যায় ভুল বাড়ি

তারপর
জানলার অসংখ্য জানলায়
তুমুল রঙিন দুঃখ
রক্তের লাল অথবা শ্যাওলার সবুজে
আমি আর আমার হাত-পা-গলা
আর মুখ-চোখ-ঠোঁট.. আর...

2 sept 2010