১০/১২/১০

৫০

বিস্তৃত বিখন্ড সব প্রতিশ্রুতির মেঘ
সুবিন্যস্ত প্রকান্ড এক মিছিলে
ধীরে ধীরে শুয়ে পড়ে অচেনা ধুলোতে

যেটুকু কয়লা বাকী ছিল হাতড়েছি,
কুয়াশা সরিয়ে তাদের শরীরে
উবু হয়ে অস্তিত্বের অধঃক্ষেপ
সারি সারি অসুস্থ কৌতুহল
সবাই পালাচ্ছিল বলেই পথের পাশে
উড়ো কার কাগজ ঝোলা দেহটা
প্রাথমিক শীতে চাইছিল দিয়েছিও
সাহসের চূড়ান্ত পরীক্ষা
অকেজো ল্যাম্পপোস্টগুলো জমিয়েছি
বিলিয়েছি, উগরেছি রক্তবমির স্বাধীনতা

নখে নখে অপেক্ষার
সন্ধ্যে-বিকেল-রাত-ভোর
বিশুদ্ধ দ্বিপ্রহর
নখ-মুখ.. মুখ-নখ..

_____________________
১০ । ১২ । ২০১০

৫/১২/১০

৪৯

বিচ্ছিন্ন জীবনের ছাই, দাউ দাউ অবৈধ আগুন
তেরচা কুঠুরিবাড়ি, সারি সারি শীতল গারদ
দেহের জগতে গত বৈকাল, আর বেসামাল
শীতের ডর্মেটরি, জেগে জেগে ঘুণ বাছে ভদ্র ভোগবান
হাঁড়িয়ার গভীরে টান আসে, নির্ঘাৎ মরণ
বেঁচে থাকে কে, সে কোন জন;

বড় কষ্টে সন্ধ্যার কানে বলে দিই
ভাল্লাগেনা শীত, একদম ভাল নেই ।

৩০/১১/১০

৪৮

তুমুল তুবড়ে আছি, বিষাক্ত স্বপ্নের যুথ
গেঁথে রাখি পাঁজরের তীব্র প্রিজনে
চোখ সেতো একফসলী জমিন,
অযথা হয়রানি তার
আষাঢ় কিংবা শ্রাবণে;
ভীষণ ভীষণ জ্বর, ভিক্ষুকের দল
রোদ যাবে, শীত যাবে,
বুকের স্বপ্ন পিষে ঘষটে ঘষটে, খাবে
বাদবাকী দিন,
ফুরিয়ে যাবো হাঁটতে হাঁটতে
একাই এক রাত সবশেষে, তারপর -
পালাব গভীরে ।।
________________________________
একটি বিকেল স্পষ্ট থাকুক,
ছায়া গাঢ় হোক
নিবিড় কান্না মুছে ভুলে যাক
পৃথিবীর যাবতীয় শব্দপাঠ
নিরপেক্ষ একা হয়ে জীবনের বিচ্ছিন্ন হাওড়ে
আঁজলাভ'রে অভিশাপ তুলে
ধুয়ে যাক আদিম দেহপাঠ ।

২৬/১১/১০

৪৭

নতুন কেনা কিছু কাপ পিরিচ পুরনো ড্রামের মতন
গভীরে জন্মানো নতুন কাঁটাটি গেঁথে যাচ্ছে আরো গভীরে
প্রাথমিক শীতের এই মরশুমেও লেপ মুড়ি, আর
কে কি বলল ভাবার আগেই খাতায় দাগ টেনে
ভালোই লাগছে কাপ-পিরিচ এবং কাঁটা আর কাঁচা শীত
বৃষ্টিও ঝরে গেছে দু'বার, রিকশাও ঠিক আগের মতোন
পথে বসা পরীদের জিরজিরে হাড়ে
জন্মে থাকে ভাত আর স্বপ্নের যৌথ ছত্রাক,

সবাই পড়ে ফেলছে ভেতরটা, একবার শুধু একবার
খুব বাইরে যাব, নতুন কাপ পিরিচে চা, জিব পুড়ছে ।।

৪৬

এখন
দিন বলে ওরা খুব চুপ
মাঝে মাঝে রাতের গাঢ় কালোতে ওরা বেঁচে ওঠে
দীর্ঘ প্রখর সব বিষাদের মনুমেন্ট, বহু দূরে ফ্লাডলাইট
আরো দূরে দেয়াল ভাঙার আওয়াজ, মুখ থুবড়ে পড়ে
আর নীচে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে যাচ্ছে
বিভিন্ন মানুষের পালসার, ফিয়াট এবং সম্পর্ক,

এই বোঝাবো সর্বশেষ
প্রচুর আলো থেকে ঢুকে দেখি অন্ধকার
সবার মুখই কালচে সবুজ ।।

২৫/১১/১০

৪৫

ঘুম থেকে উঠে কোনদিন যদি দেখি বড্ড দেরি, বোধেরাও দেরি করে,
শূন্য ঘরে একটু দূরে ঘুরে ওঠে পুরাতন পাখা, তার গুনগুনে নিরাপত্তার প্রশ্রয়
সেই অসহ্য উষ্ণতায় টুকরো হয় একাকীত্বের কীর্ত্তন,

সবাই কেবল খেতে চায় আকুল সুখ কামড়ের পর কামড়, খাক মরুক
আমি দাঁড়াই হা-ভাতে, ঠকবোই ঠকবো, দিনের পর রাত, রাতের পর ইতিহাস

মনকে পুরোপুরি সুখ
খেতে দিতে নেই
তাকে যথাসম্ভব
হা-ভাতে রাখাই
স্বাস্থ্যকর

৪৪

কেবল গড়াতে দেখতাম বাসের তলাটা
থাকত বিভিন্ন মানুষ আর
তাদের ব্যক্তিগত বিষাদে ভরপুর
শূন্য বোতলসমূহ,
এভাবে কোনদিনও ভাল্লাগেনি
দেখিনিও কোনদিন
খেতে চাইনি অর্ধেক জীবন;

যেদিন থেকে দাঁড়কাকদের নির্বাসন দিয়ে
মানুষগুলো ভাবছে পৃথিবী ভীষণ রঙিন,
আর রঙিন বলিনা কোনদিন
সাদাকালো-ই বেশ ছিল, এবং দিব্যি আছে ।।

৪৩

এবার সত্যি সত্যি হাঁটু মুড়ে বসে যাব
কেউ একজন দেখুক খুব উঁচুতে দাঁড়িয়ে
ভাবনাগুলো, অন্য মানুষের ছাদ এতকাল দেখেছি কেবল
নির্মাণাধীন ভবনের ধুলো, পুরাতন দেয়ালের ভেঙে পড়া,

ছাদে বসে বহু দূরে ঝাপসা হতে থাকা দালানগুলোর ডাক
শুনতে শুনতে শিখে নিয়েছি -
কথার ভেতর কুয়াশা থাকা কতটা জরূরী,
না হলে গা থেকে ঝুলে থাকে অসভ্য ক্লান্তির নগ্নতা,

এই হল এখনকার বিকেল
আমি ঝুলে যাব দ্বিতীয় এবং চতুর্থ তলার মাঝামাঝি
কোন এক নাটকের যে কোন সংকটকালীন মুহূর্তে, পুনঃপ্রচারে
স্বার্থপর, অসম্পূর্ণ এবং ভিত্তিহীন এক সত্যের আঁকশি বেয়ে ।।

১৪/১১/১০

৪২

বৃষ্টি পড়েনি পড়েনি,
কেন জানি কবে জানতে চাই,
জানি বা জানার ভান করি
কথার কথা সেই কথা জরুরী এবং কথা দরকারী
বৃষ্টি আসার কথা ছিল কি-না
এবার গতকাল সন্ধ্যা হল সুখ
মেঘের গন্ধ আর রিকশার হুড আঁকড়ানো অসম্ভব ভাল থাকা
বাতাসের মধ্যে ঝুলতে থাকা
আনন্দের টুকরোগুলো
সবক'টা পকেটে পোরা
খন্ড খন্ড অনুভূতি আর সামান্য ক্লান্তি,
অপেক্ষায় থাকবেন না বাঁধন, আমি কিন্তু আসবোনা
যেতে হয়না, হয়না
আর আমার দু'পাশের ফুসফুস
শেষমেষ ভয়াবহ কালো ।

৪১

খুব ধুলো আর অসম্ভব সব মেঘ গায়ে জড়াতে জড়াতেই
কষ্ট ধরা পড়ল বুকের তলায়, বাসেই চড়তাম তবু
উঠি উঠি করি রিকশায়, হেঁটে গিয়ে মানুষের ভীড়ে গেঁথে থাকি
কত বিশাল সব মুখ আর দাঁত,
সমান্তরাল হলুদ সব বিন্দুগুলোর ভেতর আর
যন্ত্রণার সাথে বিশ্রীভাবে মিশে ছিল হয়রানি
বিব্রত ভঙ্গীতেও দাঁড়াতে দিচ্ছিলনা, দেবেও না -
এই তো অল্প আগে ছেড়ে-ছুঁড়ে এসেছি সব
গাণিতিক সুখ দুঃখের ফর্দ হাতে বেড়াতে প্রবৃত্তি নেই তাই
হয়তোবা খারাপই লাগছে, লাগে

পথে পড়েছিল দুটো বৃক্ষ, একটি ভরপুর অন্যটি মৃত
তার মধ্য দিয়েই অনবরত ঝরতে থাকা ধুলো
আর বাকল, আর পাতা, পুনরায় ধুলো
কোনটা সুখ, বাকীটা দুঃখ, ছিলে যাওয়া ত্বকের মিনিবাস
আর ভেতরটা, খালি খালি খালি...

৯/১০/১০

৪০

চামড়া কেটে তাঁর বসে যাচ্ছে আঙুল,
নিষ্পাপ সুখে নগণ্য ভুল
সেঁটে গেছে কৌটোভর্তি আগুনে,
নৌকোকে মাঝ বরাবর ছিঁড়ে
আবার খুচরোতেই মেলেন শেষে ;

যা কিছু ছিঁড়ে নিচ্ছেন,
সম্পর্কের শরীর কেটে
ছুঁড়ে দিচ্ছেন দু'পাশে
উনিই আবার জুড়ে দিচ্ছেন প্রকৃত জীবন
গেঁথে দিচ্ছেন সুখ আর দুঃখের বাতুলতায় ;

কথা দেননি তবুও উনি থাকবেন,
আমাদের ছাড়া উনার চলবেই না ।

৩০/৯/১০

৩৯

পড়শু সন্ধ্যেবেলা
আমি, আর সব মানুষ মিলে আকাশে তাকিয়েছিলাম
সবচাইতে প্রতিথযশা পাগল, সে-ও
বলা নেই কওয়া নেই কেবল কাঁদল
গাঢ় এক কবি ঠিক যেভাবে হাসে;
আজ ভোরেও দেখি হাজার হাজার কাক
সে কি বিশ্বাস !
ডানা ধরাধরি করে বসে থাকে জানলার অল্প দূরে
আমি ভান করি একটু মানুষ !
আড়মোড়া ভাঙ্গি মুখে-চোখে জল
রোদে যদি ভেসে যায় সমস্ত ঘর !

মনে পড়ে অকারণ
বিস্মৃত সহস্র স্বজন
কেঁপে কেঁপে গানের ফাঁকে দুঃখ লিখি
কেননা কর্তিত ঘাস আর কৃষ্ণচূড়া এত বেশি !
এত বেশি সুখ, যে অপরাধী লাগে
এত বেশি ভাল থাকা, যে কান্না পায় ।।

২৮/৯/১০

৩৮

ভেঙ্গে পড়া নতুন এক ছাউনীর তলায়
বৃষ্টির থেমে যাওয়া দেখি
আর নিজের অনুপস্থিতি গিলে ফেলি,
কোত্থেকে প্রকান্ড এক শূন্য
রুমালের ভেতর লটকে
চটকে গেছে পেছনের পকেটে
আর লেগে লেগে ঝুলছে যৌবন,
এরপরও কর্পোরেট দালানগুলোর পাশে
সম্পূর্ণ একা অবস্থায় দাঁড়াতে দাঁড়াতে
শিউরে উঠছি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ঢাউস চিৎকারে,

কবুতরগণ আজকাল মোটামুটি সুখী
পেটের উপর পরিচয় ঝুলিয়ে
ধীরে ধীরে উঠে যায় বারান্দায়
রাস্তায় দাঁড়িয়েই চা খেতে খেতে
আর বিজ্ঞজনের বকবক শুনতে শুনতে দেখি
সবথেকে বিরক্তিকর লোকটার মুখে
দু'নম্বর সিগ্রেট ।।

৩৭

নির্বোধ মানুষগুলো কি নির্বিকার
রেয়নের বোকাবোকা পদাঁ ফুঁড়ে
ছেড়ে যাচ্ছে
ঢুকে যাচ্ছে
অদেখা ঈশ্বরের গোটানো আস্তিনে,
ওদের নষ্ট শহরে
অনেকটা শিশির সম্পর্ক
জমে জমে উড়ে যায়..
আর কচুরীপানায় জীবন খায় কেউ
সকাল-বিকাল-শেষরাত ।।

___________________ _
সেপ্টেম্বরের আঠাশ ২০১০

৩৬

খুব ছিল পুরাতন
পরিচিত দিব্যি শহর
আমিও,
ঝুলিয়ে দিই দীর্ঘ ক্লান্ত ব্যাগ
দারুণ উচ্ছ্বাসে -
পাঁপড়ি খুলছিল পায়ে পায়ে বহমান
আটটি তাজা কুঁড়ি
টগবগে, জীবন্ত, ভরপুর
ভেদভুলে হাত চাইতেই -
টেনে ধরে নষ্ট জীবন
ছিঁড়ে নেয় সুখ আর
যাবতীয় হুল্লোড়...
তাই আর হলোনা কিছুই
ক্ষয়ে গেলো বুক, জীন্স আর -
প্রাচীন জুতোর তলা ।।

২৩/৯/১০

৩৫

সেই কবে থেকে
ঘুমাতে ঘুমাতে সকাল গেল টাইলস কাটার মেশিনে
ভাল্লাগেনা রোজ শ্যেভ,
দোকানের সাটার উঠতে উঠতে
মানুষের হল্লা বাড়তে বাড়তে
গাড়ীর ভেতর ওরা পেল তুমুল হৈ চৈ,
মাথার অসুখ না হলে কি
চাবি ভেঙ্গে ভেতরে বসে
আটকে যায় দেরাজ !
বোধের ঘুম ভাঙল কি ভাঙলনা
ঘরের ভেতর সন্ধ্যে ঢুকে শুয়ে থাকে,
বায়বীয় আগুনের ভয়ে
জানলা দুটোর একটি বন্ধ করি আর
শোরগোলে তন্ময় হয়ে থাকি
উফফ.. যা বকলনা মানুষ !!

১৬/৯/১০

৩৪

এখন অব্দি পকেটে এক সেলফোন কাঁপে
বিপরীতে দন্ডায়মান কিছু বিপন্ন লোক ক্রমশঃ
পরিণত হচ্ছে ধোঁয়ার কারখানায়,
এপ্রান্তে আমি আর দু'টো নিরক্ষর কুকুর
দিন হলে মাথার উপর উড়ে যেত কাক
রাত বলে খুঁজে পেতে সামান্য বাদুড়,
নিজেকে লাগছে ঈশ্বর ঈশ্বর
ওদের লোলুপ চোখে বিজ্ঞাপনের লাল এবং নীল
খুব করে তাকালে দগদগে ভয়
দেহের দোকানে পড়ে থাকা লোকজন বুঁদ,
আর আমার উরুতে কাঁপে সেলফোন
সামনে টলতে থাকে ধুমপায়ী দেবতাগণ ।।

___________________________
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১০

৩৩

পথঘাট সব-ই নতুন লাগছে, কেন

সব বাতিই আজ আলো দিচ্ছে,

তাই কি কোন কুকুরের গায়েই আর কাদা নেই,

আস্তাকুঁড়ের সব জঞ্জাল চেটে পুটে, কে যেন

চলে গেছে জন্মের মত,শহর খুব পরিচ্ছন্ন মেম

মনখারাপের ধূসর সেই শাল জড়িয়ে চুপচাপ

তাকিয়ে আছে বড় আকাশের দিকে,ভীষণ

হলুদ আর নরম এক আলো গলে গলে

স্পর্শ নিচ্ছে দুর্বল বাকলের দাগে

চুঁয়ে চুঁয়ে জমছিল বুকের খানিক নীচে,



আইল্যান্ডের উপর বুড়ি ভিখীরি মা

কি আকুল চিকচিকে চোখে

দু'হাত বাড়িয়ে রাখে !

এসব ছেঁড়েছুঁড়ে

আমি কেমন ঘরের খোঁজে

হেঁটে চলেছি রাতের পর রাত !!

৩২

বাইরে বেরুলেই ফুটপাতগুলোর তুমুল কানাঘুষা শুনি
ক'টা ল্যাম্পপোস্ট পার হই হিসেব থাকে না
আমি হাঁটলেই এত ক্ষতি দেশবাসীর !
কেউ এল না পাশে দাঁড়াতে সাহস করে,
খানিক বৃষ্টি হলে জল জমে যায়
পায়ের আঙুলের অলিতে-গলিতে ঘাঁ হয়
তাতেই এত ভয়
মনের মধ্যে ঘাঁ না হলেই হয়,
বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ভেসে যাব
যখন যে হাওয়া পাই, ভয়ডর ছুঁড়ে দেব,
ওরা দারুণভাবে প্রতি স্টপেজে শসা ফেরি করে
আমি ওগুলো থেকেই বেছে তুলে হেঁটে যাব দক্ষিণ
বাসগুলো প্রচুর চাপাচ্ছে,
দোকানের তেরচা আলোতে অন্ধত্ব গিলে ফেলি,
এবার নাকি কেজি দরে ভগবান বিক্রি হবে ।

১৪/৯/১০

৩১

ওদের স্বয়ংসম্পূর্ণ শহরের বাইরে প্রকান্ড এক শূন্য ছিল

ওর মাঝখানে দাঁড়ালে সব-ই মনে হত মূল্যহীন,

কথা রাখবার মতন জীবিত ছিল সতেরো জন,

খুব ভাল করে তাকালে সব ঘাস উপড়ে নেবার দাগ

মানচিত্রের স্বচ্ছ অঞ্চলটুকুও যা-কিনা সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে

এতকাল সরে সরে উঠে আসছিল শহরের দিকে সেই শহরকে

অল্প অল্প

চিনতাম ।



___________

১৪|০৯|২০১০ 

১৩/৯/১০

৩০

লোকজন প্রচুর টমেটো খাচ্ছে আজকাল
বিকেলের গোটানো রোদে ছুটতে গিয়েও
ওদের দু দুটো লেংচানো গাড়ীর সাথে লেগে গেলো,
ওর আগে-পিছে-পাশাপাশি-কোণাকুনি
কোনোভাবেই হাঁটতে প্রবৃত্তি নেই,
এরই মাঝে এক লোক আর তার ছায়া
দুই বালতি রক্ত নিয়ে দাঁড়ালো,
পেছনের পকেটে পয়সা নেই
সামনের ডানদিকে বইয়ের ক্যাটালগ
বামদিকে বাসের টিকিট ছেঁড়া,

মানবীয় চুলের দূর্দান্ত দাঁড়ানোতে
ভয় লাগছে ছেলেমানুষি
কেউ একজন যদি এসে জিজ্ঞেস করে
কেন এভাবে ছিঁড়ে ফেলেছি নিজেকে !

২৯

বেঁটে মানুষগুলো হঠাৎ কি চমৎকার লম্বা বনে গেলো
বসবার নীচু বেঞ্চিতে মৃত পাতারা পুরু হয়ে জমলো
ডান বাম দেখে দুটো কুকুরের একটি আরেকটিকে জাপ্টে ধরলো
আর কোন কাক নেই কি সর্বনাশ !!
খুব একা কেউ টেপরেকর্ডারে কা কা বাজায়,
বারান্দায় ভয়ংকর মেঘ আর ধুলো
ছুটি পাইনি বলে বিদেশী গান ধরেছি
বিদ্যুৎ গেলে বাইরেটা দেখব আর
এর সাথে কোন সিংগেল সানডে হবে কি-না
খাতায় লিখছি আর ভাবছি ।

২৮

স্বপ্নে রাতভর নিষিদ্ধ গল্পের নির্বাসন চলল,
ধীরে ধীরে ঘরের মধ্যে অসম্ভব রোদ
বিদেশী গান শুনতে শুনতে খুব দূরে রিকশা পেতে
কেউ একটা লোক হারিয়ে যায়
প্রচুর ভোর আর ছুটি বলে মানুষজন খুব আসেনি
আর জল ঝরছিল দারুণ আকাশের ফোঁটার মত
গোলাপী শহরের জানলাগুলো সবই বোধহয় সবুজ
কেউ একজন মাইকে করে অন্য কাউকে ডেকে গেল
ডাকাডাকির পথঘাটে যারা ছিল ইচ্ছে করে ভুলে গেল
পৃথিবীর কথা ।

হাঁটতে পারে কি পারে না এক মানুষের বাচ্চা
কি না কি ভাবতে ভাবতে হোটেলের মুখে পড়ে থাকা
মৃত কয়লার উপর উপুড় হয়ে ভয়ানক কাঁদে ।
___________________
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০

৯/৯/১০

২৭

ইউক্যালিপ্টাস যুগের বিকেলগুলোতে আকাশ থেকে বাঁধ না মানা বিষাদেরা
ঝিরঝির ঝরতে ঝরতে ভিজিয়ে দিত দু কাঁধ, কপাল, ভ্রু - আর ঘাসকে
আঁকড়ে ধরা ছেলেমানুষী, টুঁটি চেপে হত্যা করা ইচ্ছেদের
সহজলভ্য ইস্পাতের নির্ভরতায়,

এ সবই সীমাহীন অসংলগ্নতা আর বাতুলতার ঘনীভূত শিশির
কেননা পাগলামী বড় নিষ্পাপ এখনকার আধুনিক বিকেলে
মার্জিনটানা পৃষ্ঠায় ছড়িয়ে দেয়া গাঢ় অক্ষরগুলো
শব্দ হতে না হতেই ছেড়ে উড়ে যায়
আর আমার কেবল
মরে যেতে অনিচ্ছে
মরে যেতে অনিচ্ছে...

৮/৯/১০

২৬

লোশানের টিউবে ভয়াবহ জ্যাম
তবুও চেপেচুপে সীমিত চুনকাম

প্রথাগত পৃষ্ঠাগুলোই আপাতত থাক
এমালশানে ভ'রে দিতে নতুন শব্দ
ঠুকে ঠুকে..
অনুমোদন নেব না'হয়
আগামী ফাল্গুনে
আর এই ফাঁকে
পউষের ছুটিটা হয়ে যাক সাহারায়...

সই !!!

০৮ সেপ্টেম্বর ২০১০

২/৯/১০

২৫

কেউ কেউ আছে তো এমন
ভুলভাবে এসে যায় ভুল বাড়ি

তারপর
জানলার অসংখ্য জানলায়
তুমুল রঙিন দুঃখ
রক্তের লাল অথবা শ্যাওলার সবুজে
আমি আর আমার হাত-পা-গলা
আর মুখ-চোখ-ঠোঁট.. আর...

2 sept 2010

৩১/৮/১০

২৪

মার্ক্সবাদ অথবা লেলিনবাদের ঢিল গুলতি তলোয়ার
পচে গলে ধ্বংস হতে দেখেছি নানান জায়গায় অজায়গায়
তেলচিটে নদীর পাঁজরে থইথই করা অভিশাপ বরাবরই
টেনে নামিয়েছে আর দেখিয়েছে মাটি খুঁড়লেই
সহজলভ্য পৃথিবীর হাড়,

অবহেলায় কালশিটে পড়া সময়ের মলাটে
মানবতার দুমড়ানো বুক যাতে গণতন্ত্র মালিশ হয়
মাংসের প্রচুর ভারে কি দারুণ নুয়ে পড়ে
সম্পর্কের নানান কান্নায় তোবড়ানো মানুষ ।


31 August 2010

২৩

যে যার ব্যক্তিগত দুঃখবোধ আঁকড়ে প্রাচীন সরীসৃপ
মশারা নল লাগাবে ধরে আঁকড়ে চুষে খাবে
ফুলে ফেঁপে কোন এক বিশেষ মুহূর্তে ফেটে যাবে
এরপরও কিছু ব্যথা থাকে
অনাকাঙ্ক্ষিত যানজট আর মাছের বাজারে
নিবিড় কাদার মধ্যে পিছলে যায়
মন তো নিষিদ্ধ নিখোঁজ ঘুমের অস্পষ্ট কামড়ে
ওলটপালট, তরল যন্ত্রণার ব্র্যাকেটের ভেতর
কীবোর্ডের বাটন চেপে প্রাথমিক আগুনে পোড়া
ভাল থাকার চেষ্টা করা, ভান করা

31 August 2010

৩০/৮/১০

২২

(নচেত এ বাঁচা নয়, জঘন্য আত্মহত্যার চাইতে)



যা কিছু সংঘাতে মাতে বিশ্বাসের সাথে
যা কিছু ভুল বোধ হয় তা-মেনে নিই
না, নিতে চাইনা


মনে প্রাণে ঘৃণা করি যা,
এড়িয়ে চলি
তার থেকে পালাই,
জীবন যাপন হয় না তাই
প্রকৃতই অপারগ আমি
পারা উচিতও নয়
এ-ই বিশ্বাস।


_______________________

৩০|০৮|২০১০

২১

বহুদূরে তাকাবার ভান করি কিংবা তাকাতেও চাইনি
কেবল সরে যেতে চেয়েছি অভ্যন্তরের বিশৃংখলা থেকে
তাকানোর মত আছে এক লব বিহীন ভগ্নাংশ
দেখতে পাই নিজেকে
ধ্বসে যাওয়া কোন মিনারের উপর সারাক্ষণ বসে
"কী করছ ?" প্রশ্নে বিব্রত অপরাধী যথারীতি
নিজেকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবাভাবি

30 August 2010

২০

(হতচ্ছাড়া ডানপিটে এক শহরের সব দেবদারুতে দিয়েছে নিষিদ্ধ সব কথা)


দেখাটাই দোষ তাই

বাঁকিয়ে বাঁকিয়ে চোখ

দেখি বের করে ঠোঁট,

আর ভোরবেলার

পুরাতন সেই বালিশে

ঠোঁট চেপে কেঁদে-কেটে

রীতিমত অসুখ,


বিবেক

জানে কেবল দিতে কামড়

এর জন্য আর

কাকে দোষারোপ

ভাবছিলাম


তুমুল

সেই কষ্ট সাঙ্ঘাতিক 

১৯

সকল গণিত কঠিন
আবার কোনো ক্যালকুলেটর ও নেই
পুরনো দেরাজ ঘাটলে হাতে লালচে ধুলো
আর নষ্ট অতীতের প্রকট বিষ,
সম্পর্করা হৃষ্টপুষ্ট কান্না দিচ্ছে
মাঝবেলায় বেশি ক্ষিধে পাচ্ছে

যা সওয়া অসম্ভব তা-ই ঘটবে আজকাল
এবং পীড়াদায়ক বিরতিতে
যাতে না হয় চমৎকার অভ্যেস

একটা মন বানিয়েছি
শোলা কেটে কেটে
কিন্তু কোন সাড়া নেই কেন জানি
মাপে ভুল হলো কি না ..

২৫/৮/১০

১৮

দুঃখটা অন্যখানে,
খুব ব্যক্তিগত,
সুখের মতন ভীনগ্রহী না,
সুখসংগীতের থেকে ঢের মাইল লম্বা দুঃখের শৈল্পিক প্যানপ্যান ।
মোদ্দাকথা,
আজ আবার ঝাপসা আসমানের দিন
ভ্যাপসা রোদে মনের কথা বাদ-ই দিলাম
মাথার মধ্যে থই-থই করে কাঁচা বিষ ।

রাত হতো, ঘরটাকে অন্ধকার করে টিভি জুড়ে
তার দিকে পিঠ বিছিয়ে,
দেয়ালে হাজার আলোর হরতাল দেখতাম ।

সারা শহর চুপচাপ,
কেবল ফ্যানের ফিসফিস আর চৌকিদারের হুঁইসেল
আচ্ছা, আমার একটা প্রশ্ন আছে -
এত জোরে আওয়াজ হলে মানুষ ঘুমাবে কী করে ...

25 aug 2010

১৭

এইবার চুপ কর, বেশি খেয়ে ফেলেছিস থাম, দেখছিস না মানুষগুলো স-ব খেতে শিখেছে, এমনকি কুকুরও...

বৃষ্টি নামছে তো কার কি, এবার গায়ের কাপড় খুলে শুয়ে থাক, আমড়ার মাংসতে বিট লবণ কম না বেশি কে ঘাটবে ! তুই ইটের উপর লম্বা মেরে থাক । সন্ধ্যা হল, নে.. ওগুলো রিকশা যাচ্ছে তার ক্যাঁচক্যাঁচ তুই উঠবি না । তারপর বল, এই তোর বোতাম ছেঁড়া, পাজামার সেলাই খসা, আর কি খসিয়েছিস । চড় খাবি চেঁচালে, যা দেব চুপ করে খাবি । হা-করবি না, গন্ধ হয়েছে, উফফ.. বলছি না ওতেই হবে ... আরো বিশবার ।

এই.. ঠিকমতোন জামা গায়ে চড়াবি আর আমাকে দেখিসনি খবদ্দার... গোড়ালি কেটে রেখে দেব, আর হাত, নাক, কব্জি, বুকের ফল । চুপ থাক, তোর গা গন্ধ । মাংস পচাবি না খবদ্দার, খুন হয়ে যাবি ।

২৪ আগস্ট ২০১০

১৬

(রাত বরাবরই লজ্জার)

ভীষণ ঘনিষ্ঠ কেউ গা ঘেঁষে কাদা হয়ে ঘুমায়
আমি স্পষ্ট শুনি বসার ঘরে কারা যেন চুমু খায়
ইচ্ছে করে উঠে গিয়ে হাতেনাতে ধরি আর চিৎকার করি,
"এখানে চুমো খাওয়া পাপ", ক্লান্ত লাগে, অবসন্ন লাগে,
হাওয়ার মধ্যে হাজার 'নিপাতনে সিদ্ধ' জীবাণু,
সমাধির ভেতরে পুড়তে থাকা কোন শরীর
কখনও কি খুঁজে পাবে দু'দণ্ড মুক্ত বাতাস !

মাথার জঞ্জালগুলো কামিয়ে এবার বসতে হবে টেবিল পেতে
এখানে মানুষেরা বাজে বকতে বকতে মাথায় উঠে বাথরুম করে
এবার মানসম্মত উপায়ে কামানো চকচকে টাক
বরদাশত করবে না কোনরূপ তোষামোদ,
কোনপ্রকার গাড়ীতে পায়ে পা তুলে বসা বারণ,
সব বন্ধ, এমনকি যত নির্মাণাধীন ছাদ,
সবজির নামে বেচে দেয়া যাবতীয় বিষ ।

মেঝেটা মুছে দিলে ঘুমাব এখানেই,
যদিও বিদ্যুত নেই, যতটুকু পানি আছে গা ধুয়ে চুল ধোয়ার পানি বেচে যাবে
ওদের মতন চেঁচাবো না, ঘুমাবো, গায়ে হাত দেবোনা,
শুতে চাইলেই শোব না, কসম ।

২৩ আগস্ট ২০১০

১৩/৮/১০

১৫

(লেকের পাশে এত গন্ধ থাকবে কেন !)

এক পিঁপড়ে উঠেছে আরেক পিঁপড়ের সঙ্গে,
উঠতে উঠতে সাধের ব্যক্তিগত দেয়াল ডিঙ্গিয়ে,
কিছু রক্তের রেখায় অল্প এলোমেলো হয়ে
তারপর আবার তিরতির করে উঠতে থাকে পকেটের পেছনে
শেষে বুকের কাছে অন্যমানুষের জামা লেগে ওরা গেল অন্য দেহের পৃথিবীতে ।

হাতের মুঠোতে চিনি এক প্যাকেট আর মুখের মধ্যে জমাট থু থু ফেলা যাচ্ছেনা, গেলা যাচ্ছেনা ।
অনেক্ষণ পর পর কোত্থেকে বাতাস আসে ভারী মিষ্টি আর তাছাড়া সারাক্ষণ, কি উদ্ভট গন্ধ,
পালানো অসম্ভব, বিপদ বিপদ ।

৯ আগস্ট ২০১০

১২/৮/১০

১৪

(জ্ঞান ব্যাপারটা তর্কসাপেক্ষ)

পিঠের উপর প্রচুর জ্ঞান
ছোট বাচ্চাটিকে কুঁজো হয়ে হাঁটতে হয়,

পিঠে হালকা এক ব্যাগ জ্ঞান
কিশোরটা দিব্যি কলেজে যাচ্ছে,
 
আকাশে-বাতাসে জ্ঞান
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবকের বুকে-কব্জিতে দুর্দান্ত শেকল

তো !
শিক্ষার স্তর দারুণ কার্যকর !


ক্রীড়াবিষয়ক ক্ষেত্রটাও লক্ষণীয়, প্রযুক্তি যেমন হাঁ করে গিলে খেল,
আজকাল চর্বি কমাতে আর পেশী বাড়াতে যেতে হয় দেহের দোকানে -
পেশীবহুল যুবকবৃন্দ, টগবগে ম্যানিকুইন !

খাবার ছিল বেঁচে থাকার মূল,
ইদানিং আবিষ্কার হল ইহা দেহের জন্য ক্ষতিকর,
তাই আধুনিক মানব মানবীগণ খাদ্যগ্রহণে অনিচ্ছুক ।


সভ্যতা এবং আধুনিকতা
উভয়ই যথেষ্ট জটিল বিষয়।

০৪ আগস্ট ২০১০

১১/৮/১০

১৩

(সভ্য হতে চাও, গায়ে শিল্প চরাও)

কারো পোশাক বাড়ে অপ্রয়োজনীয়
আবার হ্রাস পায় অপরিহার্য
ওরা বলে ফ্যাশন,
আমি বলি সহস্র নকশার তুমুল তুফান,
সুতি, সিল্ক, শিফনের জমিনে ।

দেহের উত্তাপ কমাতে ওরা খেত আইসক্রিম,
আজকাল উত্তাপ বাড়াতে ভদকা
নাচতে নাচতে বেশ ভান করে ঢলে পড়ে,
এই না হলে সভ্য-তা !

ভয়ংকর দর্শন মিউজিক সিস্টেমগুলো গর্জাতে গর্জাতেই হচ্ছে বিকল,
আলট্রা মডার্ণ সং সংক্রান্ত এ্যাটিচিউড বলে কথা ।
মৌসুমে মৌসুমে গাড়ী পাল্টিয়ে, বুকে বাহুতে ট্যাট্টু পরে, চুলে রঙ লাগিয়ে,
ঠোটেঁর নীচে, জিবে ধাতুর বল বসিয়ে বাড়ছে ইঁয়ো জীবী জেনারেশান ।

তাদের জন্য আধুনিক প্রার্থনা।।

০৪ আগস্ট ২০১০

১২

 (লোকজন সভ্য হয়ে যাবে কোথায়)

আঙুলে বেছে বেছে ভরেছে সতেরোটা ব্যাগ
তবু সপ্তম তলায় ওঠা চাই,
কী ভয়ংকর আলোয় ঝলসে যাচ্ছে মুখগুলো আর শরীর
সিঁড়িগুলো আপনা থেকেই উঠছে, নামছে ।
জামা, প্যান্ট, শাড়ি, সালোয়ার,
খেলনা, গয়না, বাসন-কোসন, টিভি, ওভেন,
কী যে নেই ভাববার আগেই
লোকজনের ক্ষিধে পায়,
দু'হাত তুলে ডাকে খাবারের কোর্ট,
দোসা, ফ্রাইড চিকেন, তন্দুরী
কেউ তো সিনেমা দেখবে বলেই আসে
প্রচুর রঙে রঙচঙে মানুষের এই ভীড়।

শুধু কোনো কোণ নেই যেখানে চুপ করে বসে কাঁদা যায়,
চিৎকার করে ওঠা যায় ।
মানুষ তো বটেই,
ম্যানিকুইনগুলোও আড়চোখে তাকাতে শিখেছে।



০৪ আগস্ট ২০১০

১১

(উলঙ্গ আগুনে পোড়ে যত শুভ্র ফুল)

ভীড়ের ভেতর কেউ কেউ
হাত রাখে পত্রিকার উত্তাপে,
অন্যের পায়ে মৃদু চাপে
দেঁতো হাসির শহুরে সংস্করণ।

পেছনে দৌড়ুতে থাকা সিগ্রেট, চানাচুর, খাবার জল
আবার বই হাতে তেড়ে আসে কেউ, বাসে বাসে ।
আর যারা হাত-পা বিহীন,
করুণা চাচ্ছে হৃদয়হীনদের কাছে, সমঝোতা করছে
যারা চতুর, ডাকসাইটে,
ক্ষুধার্ত বাচ্চাগুলোকে শিখিয়ে পড়িয়ে নামিয়ে দেয়,
জোর করে কাঁদিয়ে দেয়,
দিন শেষে লুফে নেয়
ছিঁড়ে নেয় জামার পকেট ।

যারা বিষজীবী, ধোঁয়াজীবী,
ছড়িয়ে বিষ শেকড়ের মূলে,
ডালপালায় মরণের স্টিকার সেঁটে বরাবর ছোঁড়ে থু থু, ভবিষ্যতের বুকে ।



০৪ আগস্ট ২০১০

১০

(চারদিকে অজস্র ছায়া)

অতটুকু বেঁচে থাকা সন্ধ্যেবেলা
সেতুর শরীরে শরীর, আর সন্ধ্যাতারা

জমাট ভীড়ে, প্রচুর মানুষ
গায়ে গা ঘেঁষে হাঁটে
মহিলা-বাচ্চা-বুড়ো নির্বিশেষ ।

আকাশ মায়াকাড়া লালচে,
কোথাকার কোন আলো
মেঘ থেকে বেরুতে চায়,
তাই দেখে গোটা গা'য় ঝিমুনি,

আর উল্লম্ব নয় কোনদিন , কেবল আনুভূমিক ।


১ আগস্ট ২০১০

০৯

(জল জল আর জল)

শেষ না হোক, শেষ কে চায় !

জমাট ঘাসে বসি,
মিহি বালির গায়ে আঙুলে দাগ দিই,
গায়ে গা করি,
হাওয়া ঢালে শরীর ।

কাঁকড়ের স্তুপে পিঁপড়ের সারি,
কলমি হেলেঞ্চার পাতাগুলো ওভাবে কে ছিঁড়ল !
আকাশে একধারে মেঘ, অন্যধারে লাল লাল এবং নীল !

পানিশাকের ঝোপে তিনটে হাঁস,
একপাশে ভীড় হয়ে থাকা কচুরীপানা আর ওর মাঝেই লুকোচুরি দিচ্ছে জলজীবীরা,
ওরা ভাল থাকুক ।।

৩১ জুলাই ২০১০

০৮

(উড়াল ব্রীজের উপর দাঁড়ালে বাস আর মটরগাড়ীর হাড়)

পুরনো পত্রিকার সম্পাদকের মাথার অসুখ,
বিজ্ঞাপনপিছু দুটো করে মেয়েমানুষ বেচে দিচ্ছে
কাগজকলের ভয়াবহ দুর্যোগ,
মরিচে ঝালের সংকট দাম বাড়তি
বিলবোর্ড পাল্টাচ্ছে আবার
পুরনো সাইনবোর্ড হলুদ রঙ লাগাচ্ছে,
অথচ দেখছেনা শহরের মন খারাপ,
সে কেবল গ্রাম হয়ে যাবে স্বপ্ন দেখে ।

মানুষ আর গাড়ী খুব বেশি ভিন্ন কি !

বিড়ি খেয়ে ক্ষিধে নষ্ট করার মানুষ বহু,
আবার টাকার মধ্যে কিছু সস্তা শব্দ আর
যোগাযোগের গাণিতিক মাধ্যম সাঁটানো কারো কারো মৌলিক কর্ম ।
পারভীন বা জয়নাল, যাদের প্রকৃত খাবার প্রয়োজন,
যাতে ঝাল বেশি নুন কম বেশ গরম,
তবু চেটেপুটে খেয়ে চাপকলের মিষ্টি জল
আর ঘুম, সে ঘুমোলেই হল ।

২৯ জুলাই ২০১০

০৭

 (এক টিনের কৌটোতে শহরের নামী কবিরাজদের নাম লেখা চিরকুট)

কেউ ঘুমায়,
কেউ ভান করে গুহাবাসী বাঁচে
অবশিষ্ট জেগে রাত্রি দ্যাখে,
চুলের কোলে ধুলো পোষে,
ঝরা পাতা, ঘামের বিন্দু, শিশিরের দাগ,
গাড়ীর তেরচা আলো
আস্তে করে রাত বুড়ো হয় ।

ফলের দোকান, আন্ডারপাস, ওষুধের দোকান,
ময়লার বাক্সে ফেলে দেয়া পলিথিন ব্যাগ, ডিমের ভাঙ্গা খোসা ।
এই এক টেম্পো শব্দ দিল
ফুরোতে ফুরোতে রাত রোদের গায়ে ঘন ঘন সুড়সুড়ি দিয়ে যায়
তাই চোখ কচলানো ভোর
সাক্ষী ছিলাম বলে চুয়ান্ন ধারায় গ্রেপ্তার ।

ভাঙাচোরা ঘরটা জানলাটা দেখছি,
তারপরও কী গাঢ় ভালবাসা
সংজ্ঞা নিয়ে কেউ নেই প্রশ্ন তুলবার
যাত্রী ছাউনী, আশ্রয় সর্বশেষ, পায়ে হাঁটা মৃত মানুষ দেখি ।

স্টেশনের খুচরো লোকগুলো
বুকে বোতাম নেই,
খুড়তে খুড়তে ফুটো শহরের মেঝে, শেষে মরেছে
কিছু জৈবিক ছত্রাক রেখে অবশেষ,
লজ্জার স্থিতিস্থাপক বেলুন, ব্যবহৃত শিশিগুলো;
জং ধরে ক্ষয়ে যাওয়া ছুরিতে খোদাই, অনিবার্য অপঘাত 


২৯ জুলাই ২০১০

০৬

(শহরে নেই কাকের কমতি তবু পাখি থাকেনা)

ফুটপাত,
প্রচুর হল্লার পর প্রায় শান্ত
কেননা নিশুতি,
বাঁ তালুতে মুছে চোখ
আরেকটাতে জ্বলন্ত কাঠ,
চুলো পোড়ানো আজব ঝক্কি
পোড়াগন্ধ পরিবেশ,
নিয়নপোস্টের যৌবনকাল,
চার ঘন্টা পর ভোর ।
আবুল, সালাম, সালমাদের অশ্রুমূল্য
কমতে কমতে দু'টাকা বা এরও কম, খাবার হোটেল চোখ কচলায়,
ফিল্টার পানি যথেষ্ট শীতল নয়, গালি খায়
চোরা এক ট্রাক টলতে টলতে যায় ।

ওরা বের হয়েছিল
আর বের হবার ইচ্ছেটাই কাল,
রক্তের রং লাল, কাল গেলে খয়েরী;
চা পাতার সংকট, বিড়ির দাম বাড়তি,
যে খায় সে মরে, যে না খায় পস্তায় অধিক;
শহুরে রাতের ক্লিয়ারেন্স,
অতি শুদ্ধবাদী সমাজের ভন্ডামী, নষ্টামি;

ভরা চাঁদের আত্মহত্যা ।

২৬ জুলাই ২০১০

০৫

(সেতুর গোড়ায় বাদামী মেয়েটার কালো চুল উড়ছিল জলশুদ্ধ)


সেদিন অনিয়ম দিবস ।
নগরের পরিত্যক্ত মসজিদটির তালা ভেঙ্গে আজগুবি লোকগুলো জামা খুলে দিয়েছিল ।
মেঘগুলো জল দেবেনা,
অচল ঘোড়ার গাড়িতে দুদিনের লাশ আর মাথায় ঠোঁটে শ'খানেক মাছি ।
ম্যানহোলের ডালার ওপাশে একটা মানুষের বাচ্চা হাত পা বাঁধা,
একবিন্দু দুঃখকে আঁকড়ে ভেসেছিল গলন্ত মাথা ।

সময়টা দূষিত বায়ু বা প্রচুর দূরবর্তী সমূদ্রের নিয়মে তারিখের তালিকায় ফিরে গিয়েছিল ঠিক,
তবে প্রেম হারাল তাবৎ পুরনো মানুষ আর স্বচ্ছ হৃদপিন্ড
তিনদিনের ভুখা মেয়েমানুষ পথেই শোয়, পরের বেলার দুটো রুটি বা সবজিভাতের নিশ্চয়তায় ।
জন্তুমুখো পুরুষগুলো চোয়ালের কার্যপ্রণালী সমৃদ্ধ করে
ফুটপাতের চাপা গোঙানি ল্যাম্পপোস্ট, ভাঙ্গা সাইনবোর্ড,
দুর্গন্ধসর্বস্ব খাল আর পাগলের শরীর ।

বিক্রি না হওয়া সবজিগুলো একত্রিত হবে,
পিপড়ের বাসা বনে পচতে থাকবে যদিনা আবর্জনার গাড়ি খবর পায় ।
যদি ভুল করে বৃষ্টি ঘটে জলও জমবে, কাদা হবে,
চেনা দোকানে দেনা বাড়বে,
ইট ভাঙা বুড়োমানুষটা থ্যাঁতলানো হাত নিয়েও বাসি ভাতে বসে যাবে রোদশুদ্ধ দুপুরবেলায় ।

২৫ জুলাই ২০১০

০৪

(নিরেট ধোঁয়ায় বসে কেউ খাবে সুখ)

একমনে হেঁটে যাবে যারা বোকা গোবেচারা
যারা ঘুম থেকে হাতে করে স্বপ্ন নিয়ে ওঠে,
ভাবেনা পথের ধারে ঘুমাতে গিয়ে
অথবা যারা শোয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিছানায়,
তাদের ঘুম

খাওয়া যায় মাটিতে বসেই
তবে বহুমূল্য ডাইনিং টেবিল, তাতে কত বাড়ে খাদ্যগুণ !
কারা খায়, কাদের খেতে দেয়, আর কারা খাবেনা, ছড়াবে !
একমাত্র ফুলকে ছিঁড়ে গাছকে নিঃস্ব করে যাবে,
তারপর পায়ে মাড়াবে !
আর সুখী হবে বারবার !

২২ জুলাই ২০১০

০৩

(সাবধানে কাটা তবু রক্ত গড়িয়ে পড়ে)

এরা বিচ্ছিন্ন অতঃপর

বাঁ পাশে মাথা তোলা বিকৃত সাইনবোর্ড
হাজার বৎসরের জমাট যন্ত্রণায় কালো হয়ে থাকা
ক্রমশঃ রক্তের গায়ে জমা পড়ে জোড়া জোড়া পদচ্ছাপ, এরা যায়

সভ্যতা এবং শহর,
লকলকে হলুদ জিব, সন্নিবিষ্ট অনুভূতি,
ক্রমান্বয়ে ভাঙতে থাকা আলোর দালান,
উগরানো বাক্যের ভীড়ে কিছু আঁচড়, গভীরতর
সীমিত বক্রতার নিজস্ব খনন, সঞ্চরণশীল
লালসার ব্যাপ্তিতে অপ্রাপ্তি
প্রচুর ঝড়-জল,
রাস্তার পর্যাপ্ত কাদায় টেনে টেনে রিকশা
বাসগুলোর থেমে থাকা, চলে যাওয়া ।

খাওয়া-পরার চিন্তা নেই বলে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে, বিলবোর্ডগুলো
কেউ কেউ ব্যানারে লজ্জা ঢাকতে পারছে,
হতভাগা শহরটার কাপড় নেই, বড়সড় লজ্জা বুকে কুঁকড়ে
নামে রাত, নামতে নামতে বেঁকে যায় উঁচু উঁচু ভবনের শরীরে
সময় এবং অসময় মাতে একে অন্যের উপহাসে
ফাঁকতালে চুরি হয় ।
বেশিরভাগ মানুষ ঘুমন্ত, সম্ভবত কেননা
কেউ ভাবছেই না পুড়ে যাচ্ছে পৃথিবী , কেউ ভাবেনা কখনও ।

বর্ষার মেঘ সবিশেষ,
বর্ষণের আশ্বাসে উড়ে আসে প্রশস্ত আকাশে ।
নির্ধারিত পরিক্রমায় পাতা ওল্টাতে
দখিনের হাওয়া দিক ভুলে জল ছুঁয়ে জড়ো হয়
কোন নিঃসঙ্গ গাছের নীচে
পরবর্তী গন্তব্য মানচিত্র হতে মুছে যায় ।

২২ জুলাই ২০১০

০২

(ইচ্ছে করে ফেরিওলার সব তোয়ালে কিনে রাখি)

কিন্তু কী হবে ?
চোখ বন্ধ, জানি সামনে বিস্কুটের ফ্যাক্টরী,
ফুলের দোকানে বিনামূল্যে পচা ফুলের সুবাস,
আর কার যেন বিয়ের গাড়ী, ধাক্কায় রসগোল্লা গড়াল নর্দমায় ।

এরপর ধরা যাক রাস্তা লম্বা সরু
চোখ বুঁজে হাঁটলে হোঁচট, হারালে বিপদ,
জায়গা অ-জায়গায় ঢিল, সূত্রে গোঁজামিল,
সরলের ফল মেলেনি, মেলেনা ।
মানুষ যতই বানাক ভান, মুরগির রানটাই খাবে ঠিক ।

চেনা হলে নয়, অচেনা রিকশাতেই বিতণ্ডা চলে
বাসে উঠে যার তার গায়ে হাত দেয়া যায়,
আর ক্ষিধে থাকে হোটেলের আশেপাশে, অচেনা খাদ্যের ঘ্রাণ টানে
আর কাক, সেতো মুরগির পালকে লটকে থাকা মাংসটুকু ছোঁ মেরে নেবেই ।

বরাহপুত্রগণ তের কোটি টাকা চুরি করলেন আর বাহবা খেলেন,
তাহলে বাচ্চা ছেলেটা চা-তে চিনি কম হলে ধমক খাবেনা !!
এতদসংক্রান্ত আর্টিকেলে পাটকেল দেয় বারডেমের সামনে ইদানিং বসে থাকা পাগলটা,
শিডিউল হট, অ্যাপয়েন্টমেন্ট দুর্লভ !!

প্রচন্ড স্যুপ খেতে ইচ্ছে করলেও খাওয়া যাবেনা ।

০১

(পায়ে পা ঘেঁষে দূরবর্তী দোকান)

চা হয়
তাতেই ঝুলে ছিল শুকনো রুটি,
ওটার গায়ের ছিদ্র তালুর স্পর্শের বিবেচনায়
বেঞ্চিতে বসা বৃদ্ধমানুষ দাঁড়ির মাছি,
কানামাছি নয় ।
থেমে থাকা গাড়ির কাঁচে ধুলো
আসমা খাতুন, বিমূর্ত প্রলাপ ।
পরিপ্রেক্ষিত খাবার জল
এক আঁজলা সম্বোধন, লোকজন মৌমাছি
বিনোদনের প্রযুক্তিগত উৎপাদ,
সমানে সমানে দুটো শপিং মল হাতাহাতি চাইছিল,
কাছে দূরে উড়াল ব্রীজ, এদের যাবতীয় ব্যস্ততা ।

ছোট বাসগাড়ির মানে কি -
এক মানুষের গায়ে ঘাম মোছে অন্যমানুষ !
কারো কারো কাছে -
টাকাকড়ি এতটাই সার্বজনীন !
আস্তাকুঁড় ছাড়া কি কুকুর বসেনা !
কুকুর ছাড়া কি নেই আস্তাকুঁড় !
এসব সূত্র কি নেই পদার্থবিদ্যায় !
আর ভ্যাপসা দিন -
এতটাই বুড়ো যে রঙের টিউব লাগবে !

কোন পুস্তক লালসা জাগালে তা চুরিতে দোষ নেই
কেননা আমরা ডিমচোরকেও দোষ দেই
রাজপথ খুঁড়ে টাকা বের করে যোগ্য নেতা স্বাস্থ্যবান
আর আমরা
ঘামে নেয়ে
বাসে ঝুলে ঝুলে
বাসায় ঢোকামাত্র লোডশেডিং !
এ-ই বোধহয় চাই।।